বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনার প্রকল্প ভারতেরই করা উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা প্রজেক্টটা আমাদের করতে হবে। চীনও আমাদের কাছে কিছু অফার দিয়েছিল। তাদের ফিজিলিবিটি স্টাডি করেছে। ইন্ডিয়াও আমাদের কাছে অফার দিয়েছে। ইন্ডিয়াও ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে। এটা করার পরে, যেটা আমাদের জন্য যুক্তিযুক্ত হবে, আমরা সেটা নেব। পরে অবশ্য শেখ হাসিনা ভারতের প্রস্তাবের পক্ষে থাকার কথা তুলে ধরেন। বলেন, চীন তো রেডি। কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ইন্ডিয়া করে দিক। এই প্রজেক্টটা করলে এই প্রজেক্টটার জন্য যা দরকার, ইন্ডিয়া দিতেই থাকবে। ঠিক আছে? যা সাফ সাফ কথা, রাখা ঢাকা নাই। খবর বিডিনিউজের।
ভারতের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ তিস্তার পানিটা ইন্ডিয়াই আটকে রেখেছে। কাজেই তাদের কাছ থেকে আমাদের যদি আদায় করতে হয়, প্রজেক্টের কাজ তাদেরই করা উচিত। তারা প্রজেক্ট করে আমাদের যা প্রয়োজন তারা দেবে। এটা তো একটা ডিপ্লোমেসি। এখানে আর কোনো দ্বিধা থাকার তো কথা নয়। তিস্তা প্রকল্প বহু যুগের প্রকল্প জানিয়ে তিনি বলেন, আমার যতটুকু মনে পড়ে, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে (১৯৫৪ সালে) ছিল, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে অনেকবার ছিল।
গত জুনের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তা মহাপরিকল্পনায় দেশটি যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখায়। এর অংশ হিসাবে ভারতের একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে বলে শেখ হাসিনার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানান ভারতীয় সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদী।
এর আগে চীনও এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। তারাও বাংলাদেশকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছিল।
মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়। নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি। ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি আটকে থাকার মধ্যে ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট’ হাতে নেয় সরকার।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেইজিং সফরে এটিসহ আরো কয়েকটি প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সরকারের সহায়তা চেয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে। তিস্তা প্রকল্পে নদীটির উপকূল ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল বিবিসি। ২০২২ সালে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তিস্তা বাঁধ ও সেচ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনও করেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছিলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। নির্বাচনের পর তা শুরুর আশা করেন তিনি। চীন রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্য এবং এ প্রকল্প নিয়ে ভারতের আপত্তির প্রসঙ্গ তুলে এক প্রশ্নে ওই সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেছিলেন, এ রকম অনুমাননির্ভর প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা সহজ নয়। এ রকম কোনো প্রস্তাব যদি থাকে, তখন ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় এগোতে হবে।
জানুয়ারিতে নতুন সরকার গঠনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিস্তা নদী প্রকল্পের বিষয়ে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের দিক থেকে প্রকল্প প্রস্তাব পেলে চীন তা বিবেচনা করবে এবং সহযোগিতা দেবে। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখব।
শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চীন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের কাজ করবে। আমাদের দক্ষিণ অঞ্চল সব থেকে বেশি অবহেলিত, পদ্মার ওপার, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন কাজের জন্য আমি চীনকে বলেছি। সব থেকে অবহেলিত এবং ওখানকার কাজগুলো করা খুব কঠিন। পিরোজপুর যাওয়ার একটা নদী পেকুটিয়া, এটা দীর্ঘদিনের একটা আকাঙ্ক্ষা, ওটাও চীন করে দেবে। এটার জন্য কোনো পয়সা লাগবে না, তারা করে দেবে। কাজেই আমি কাজ ভাগ করে দিয়েছি, কোথাকার কাজ কে করবে, কঠিন কাজ সহজে করতে পারব। সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়।