তিমিরে থেকে গেছে পারকি সৈকতের অপার সম্ভাবনা

আজ পরিদর্শনে যাচ্ছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ মার্চ, ২০২৪ at ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পর পূর্ণাঙ্গ পর্যটন স্পট হিসাবে পারকি সমুদ্র সৈকতের সম্ভাবনা বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু শহরের কাছের এই সমুদ্র সৈকতের বিবর্ণ দশার কোনো পরিবর্তন নেই। সৈকতে প্রবেশের রাস্তা, থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, বিনোদন অনুষঙ্গ সব কিছুতেই যে তিমিরে ছিল সেখানেই পড়ে আছে পারকি। শোভা বর্ধনকারী ঝাউ বাগানের সারিও হারাচ্ছে যথাযথ পরিচর্যার। পারকি সৈকতের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে এলাকাবাসী হতাশ। এলাকাবাসীর দাবিআর উন্নয়নের আশ্বাস নয়, বাস্তব উন্নয়ন দেখতে চান তারা।

স্থানীয়রা জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালুর পর পারকি সমুদ্র সৈকতে গুরুত্ব বেড়ে গেছে শতগুণ। টানেল দেখতে এসে পারকিতে বেড়াতে আসে নাএমন পর্যটক কমই আছে। কিন্ত প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও পর্যাপ্ত পর্যটন সুবিধা না থাকায় পারকি সৈকতে এসে হতাশা হন দর্শণার্থীরা। উজ্জ্বল সম্ভাবনার পারকি সৈকত বাস্তবে যোজন যোজন পিছিয়ে। গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পারকি সৈকতের যে সব উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়নে সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেই।

সৈকতে প্রবেশের প্রধান সড়ক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপি সড়কটি ছাড়া বাকি তিনটি সড়ক যানবাহন চলাচল অযোগ্য, সড়কগুলোর এমন বেহাল অবস্থা যে পায়ে হেঁটেও যেতে কষ্ট হয়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সড়কে গর্ত হয়ে অকেজো হয়ে পড়েছে। সৈকতের বড় কয়েকটি সমস্যার মধ্যে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাও একটি। সৈকতের নির্ধারিত পার্কিং ছোট হওয়ার কারণে পর্যটকদের গাড়ি পার্কিং করতে হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা বা মূল সড়কের উপর। সৈকতে নেই কোন নিরাপত্তাকর্মী। নেই পর্যাপ্ত ওয়াশরুম। ময়লা আবর্জনার কারণে সৈকতের বালুচরের পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠে। তাছাড়া নেই কোনো আবাসন সুবিধা। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ না থাকাসহ নানা সমস্যার আবর্তে বন্দী পারকির পর্যটন সুবিধা। এদিকে ৭৯ কোটি টাকার পরিকল্পনায় নির্মিত পর্যটন কমপ্লেঙটির কাজ শেষ করার জন্য বার বার তাগিদ দেয়া হলেও কয়েক দফা মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে ধীর গতিতে চলছে কাজ। মানসম্মত কাজ না হওয়ায় সর্ব মহলে ক্ষোভও রয়েছে। সৈকতের মূল সড়কে গাড়ি থেকে ইজারা টাকা আদায় নিয়েও জনমনে অভিযোগ রয়েছে।

সৈকতের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আনোয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার পর পারকি সৈকতে কয়েক গুণ বেড়েছে দর্শনার্থী। কিন্তু পর্যটন সুবিধা না বাড়ার কারণে দর্শনার্থীরা এসে হতাশা প্রকাশ করে। নানা সমস্যায় জর্জরিত এ সৈকত। সৈকতের গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা যথাযথ না থাকা, মেয়াদউত্তীর্ণ ইজারাদার গাড়ি পার্কিংয়ের ইজারা নেওয়া, মূল সড়ক ছাড়া তিনটি সড়ক অকেজো, ঝাউ গাছগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবকিছুতে ঘাটতি আছে। স্থানীয়রা পারকির উন্নয়ন সম্ভাবনার কথা শুনতে শুনতে তিক্ত বিরক্ত।

বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের এম.. কাইয়ুম শাহ বলেন, পারকি সমুদ্র সৈকত একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সারাদেশে পরিচিত লাভ করেছে। কিন্তু যেভাবে পারকির উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সে অনুসারে উন্নয়ন হয়নি। শুধু তাই নয়, ৮০ কোটি টাকায় নির্মিত পর্যটন কমপ্লেঙ নির্মাণে নিম্নমানের কাজ নিয়েও নানান প্রশ্ন আছে। মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে কমপ্লেঙের নির্মাণ কাজেও ধীরগতি। পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময় যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে পর্যটকদের ভোগান্তি বাড়ে।

এদিকে আজ শনিবার বিকেলে পারকির উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন, দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করবেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। এছাড়া তিনি রায়পুরে বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইন্দোনেশিয়ার উপকূলে নৌকা ডুবে ৭০ রোহিঙ্গার মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত