চীনের তিব্বতের প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে খুবই শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১২৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম। ইউএসজিএস জানায়, গতকাল মঙ্গলবার বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১।
চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, হিমালয় পর্বতমালার উত্তরাঞ্চলীয় প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত প্রত্যন্ত ডিংরি কাউন্টির সোগো শহরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা পর্যন্ত অন্তত ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে আর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৩০ জন। খবর বিডিনিউজের।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ২০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে তিনটি শহর ও ২৭টি গ্রাম আছে। এগুলোর মোট লোকসংখ্যা ৬৯০০ জন। শিগেইস বিভাগের ডিংরি কাউন্টিতেই অধিকাংশ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ডিংরির চাংসুও শহরে টংলাই এলাকায় বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। শিগেইস বিভাগের লোকসংখ্যা প্রায় আট লাখ। শিগেইস বিভাগের কেন্দ্রীয় শহর শিগেইস তিব্বতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, এটি শিগাৎসি নামেও পরিচিত। লাসা থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপমশ্চিমের এ শহরটি তিব্বতের দ্বিতীয় পবিত্রতম শহর এবং পাঞ্চেন লামার বাসস্থান। ভূমিকম্পে হিমালায় পর্বতমালার নিকটবর্তী এই শহরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডিংরি কাউন্টির প্রধান সিনহুয়াকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পটি তাদের কাউন্টিতে প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে। মূল ভূমিকম্পের পর কয়েক ডজন পরাঘাতও অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শহরে উপস্থিত হচ্ছে বলে সিনহুয়া জানিয়েছে। উৎপত্তি স্থল থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতেও ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে। ভোর সকালে কাঠমাণ্ডুর বাসিন্দারা ঘরে ছেড়ে বাইরে ছুটে যান। ভূমিকম্পটি ভুটানের রাজধানী থিম্ফু এবং ভারতের বিহার রাজ্যসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে অনুভূত হয়েছে। তবে এসব অঞ্চলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর হয়নি। ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে কারণে চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল, নেপাল ও ভারতের উত্তরাঞ্চলে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পটি নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি বাংলাদেশেও অনুভূত হয়েছে।
উদ্ধারে চ্যালেঞ্জ : আনন্দবাজার জানায়, তিব্বতের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারেরও বেশি বাড়ি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিব্বতের ডিংরি প্রদেশ। ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটাতে না কাটতেই এই অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। উৎসস্থল থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট। রাতে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ধ্বংসস্তূপে ভরা শহরে ঘরছাড়া মানুষেরা কোথায় আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।
নেপাল সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের সময়েও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে ছিল। সকালে মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল তাপমাত্রা। এভারেস্টের কাছে এই হিমশীতল পরিবেশে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে চীন প্রশাসন। কাপড়ের তাঁবু, কম্বল এবং এই ধরনের শীতল জায়গার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে।