তিন সপ্তাহের মধ্যে আবার ডুবল নগরী

এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ।। নতুন নতুন এলাকা জলাবদ্ধ ।। আজ কমতে পারে বৃষ্টি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ভারী বৃষ্টিতে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও ডুবে গেছে নগরীর নিম্নাঞ্চল। এছাড়া চলতি বছর বৃষ্টিপাতে আগে কখনো জলাবদ্ধ হয়নি এমন এলাকাও পানিতে ভেসেছে। এক্ষেত্রে নগরবাসীর নালানর্দমাসহ যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ব্যর্থতা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১২৪ মিলিমিটার। অপরদিকে আমবাগানে একই সময়ে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ২১৭ মিলিমিটার। এর আগে গত ৭ আগস্ট পতেঙ্গা আবহাওয়া গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে ভারী বর্ৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে গত শনিবার রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতে নগরীর নিচু এলাকার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এছাড়া গতকাল চট্টগ্রামে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার ফলে সকাল থেকে পরীক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় বেশিরভাগে বাসায় রান্না হয়নি। এমনকি পাড়ামহল্লার বিভিন্ন দোকানসহ নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার ও ফলমন্ডির আড়তেও পানি প্রবেশ করে। জলাবদ্ধতায় গতকাল সকালে কর্মজীবী মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। সড়কে কমে যায় যানবাহনের সংখ্যা। বাধ্য হয়ে অনেকে রিকশাসিএনজিতে দ্বিগুণতিন গুণ ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে যান। উপায় না দেখে অনেকে হেঁটে গন্তব্যস্থলে যান।

জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাতে গতকাল নগরীর হালিশহর সবুজবাগ, আই ব্লক, বি ব্লক, ওয়াপদা মোড়, মইন্নাপুকুর পাড় এলাকার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আগ্রাবাদ বড়পুল, ছোটপুল, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকায় পানিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া মুরাদপুর, ২ নং গেট, আলফালাহ গলি, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, বাদুরতলা, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চান্দগাঁও ফরিদার পাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সিপুকুর পাড় এলাকাতে ছিল হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। বাকলিয়া, ফুলতলা, ডিসি রোড, মিয়া খান নগর, কেবি আমান আলী সড়ক, সৈয়দ শাহ সড়ক, চাক্তাইখাতুনগঞ্জের নিচু এলাকা, দেওয়ান বাজার, হেমসেন লেন, খলিফাপট্টি, রিয়াজুদ্দিন বাজার, ফলমন্ডি, আকমল আলী রোড এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে।

চকবাজার ফুলতলা এলাকার দিনমজুর হাসান আলী বলেন, রাত ২টার দিকে ঘরে পানি ঢোকে। আস্তে আস্তে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে দুই বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে পার্শ্ববর্তী একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নিই। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।

গতকাল সকালে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আশিক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বারিক বিল্ডিং মোড়ে আমার অফিস। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। পানি মাড়িয়ে মুরাদপুর থেকে হেঁটে আসছি।

হালিশহর সবুজবাগ এলাকায় দেখা গেছে, একটি ভবনের নিচতলার বাসায় হাঁটু সমান পানি। বিছানায় নিরুপায় হয়ে বসে আছেন বাসিন্দারা। আরেকটি বাসায় এক নারীকে বাসায় প্রবেশ করা পানি গামলা দিয়ে অপসারণ করতে দেখা যায়।

ফারুক আহমেদ নামের এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রত্যেক বর্ষায় তিনচার বার বাসায় পানি ঢোকে। আমাদের মতো গরিব মানুষের কষ্টের শেষ নেই।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ ও পূর্ভাবাস কর্মকর্তা সুমন সাহা বলেন, বৃষ্টিপাতের মাত্রা আগামীকাল (আজ) কমবে। তবে কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। টানা ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা কম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিনা বেতনের গেটম্যান কয়েকদিন ধরে অনুপস্থিত
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশভ্যানে ট্রেনের ধাক্কা, তিন কনস্টেবল নিহত