দিনে দিনে সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, তিন শতাধিক অবৈধ ভলগেট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। কোন ধরনের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র এসব ভলগেট ব্যবহার করে বহির্নোঙর থেকে হাজার হাজার টন পণ্য পরিবহন করছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, ঘোষণা বহির্ভূতভাবে আনা পণ্যও এসব ভলগেট পরিবহন করছে। কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই চলাচলকারী এসব অবৈধ ভলগেটের সংখ্যা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের ঝুঁকিও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
বন্দরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ভলগেট বা বাল্কহেড এক বিশেষ ধরনের নৌযান। কোন ধরনের নেভাল আর্কিটেক্টচারাল ডিজাইন ছাড়াই নৌযানগুলো তৈরি করা হয়। কারিগরি নকশা ছাড়াই মিস্ত্রি ও ওয়েল্ডার মিলে নিজেদের মতো করে ভলগেট তৈরি করে। এসব নৌযান তৈরির সাথে জড়িত মিস্ত্রি কিংবা ওয়েল্ডারদের কারোরই কোনো নেভাল সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই। নদী পাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন ডক ইয়ার্ডে এসব বাল্কহেড তৈরি করে নদীতে ভাসানো হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বল্প দূরত্বে বালি পরিবহনের জন্য এসব বাল্কহেড ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যেসব এলাকায় লাইটারেজ জাহাজ বা যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল রয়েছে সেখানে ভলগেট বা বাল্কহেডের চলাচল নিষিদ্ধ। দেশের কোথাও ভলগেটের বে–ক্রসিং এর অনুমোদন নেই। বন্দর চ্যানেলে ভলগেট চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল এবং বহির্নোঙরে তিন শতাধিক ভলগেট চলাচল করছে। কোন ধরনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভলগেটের চলাচল চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল এবং বহির্নোঙরকে হুমকির মুখে ফেলছে।
অভিযোগ করা হয়েছে যে, একশ্রেণির আমদানিকারকদের পক্ষে এজেন্ট কিংবা পণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিরা গোপনে লাইটার জাহাজের বিকল্প হিসেবে ভলগেট ব্যবহার করছে। টন প্রতি এক–দেড়শ’ টাকা ভাড়া সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ভলগেটের ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং নারায়নগঞ্জে প্রতিটন পণ্য লাইটারেজ জাহাজে পরিবহন করতে যে পরিমাণ ভাড়া আদায় করা হয় তার থেকে এক–দেড়শ’ টাকা কমে ভলগেট ওই পণ্য পরিবহন করে। এতে কোটি কোটি টাকার পণ্যের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন ছাড়াও পুরো সেক্টরেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ভলগেটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে পাথর এবং কয়লা পরিবহন করা হয়। এক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা এবং ঘোষণা বহির্ভূতভাবে আনা পণ্য পরিবাহিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বিদেশ থেকে মাদার ভ্যাসেলে বাড়তি পণ্য নিয়ে এসে কোন ধরনের শুল্ক পরিশোধ না করে অবৈধ ভলগেটে তুলে দিয়ে পার করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর এবং বন্দর চ্যানেলে তিন শতাধিক ভলগেট নিয়মিত পণ্য পরিবহন করলেও এরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভলগেট চলাচল নিষিদ্ধ। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভরাট কাজে ব্যবহারের বালি পরিবহনের জন্য সাময়িকভাবে কিছু ভলগেটকে চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়। ভলগেটে পণ্য পরিবহন কিংবা মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য লাইটারিং পুরোপুরি অবৈধ।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, ভলগেটে পণ্য পরিবহনের কোন সুযোগ নেই। অথচ আমরা প্রায়শঃ অভিযোগ পাই। বন্দর কর্তৃপক্ষ আগে অভিযান পরিচালনা করতো। এদের বিরুদ্ধে বন্দরই ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভলগেটে পণ্য পরিবহন অবৈধ। শুধু পণ্য পরিবহনই নয়, এখানে তাদের চলাচলেরও কোন অনুমোদন নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে। অবৈধ ভলগেট বন্ধ করার ব্যাপারে আরো বড় পরিসরে অভিযান চালানো হবে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর কিংবা বন্দর চ্যানেলে এসব ভলগেটের চলাচলের কোন সুযোগ নেই। যে কোন ধরনের ঝুঁকি তৈরি হলে তা ঠেকানোর জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব অভিযান চালিয়ে এগুলো ধরে নিয়ে আসেন। প্রয়োজনে আরো বড় পরিসরে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বালুর জাহাজে পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণ অবৈধ উল্লেখ করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জি এম খান বলেন, বালু পরিবহনের জন্য তৈরি ভলগেট বা বাল্কহেডে পণ্য পরিবহনের অনুমোদন নেই। ভলগেটে কোন ধরনের প্রশিক্ষিত নাবিক নেই। মাস্টার নেই। সুকানিরা ভলগেট পরিচালনা করে। এটি বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, ভলগেটে যখন বালি বোঝাই হয় তখন সেগুলো প্রায় ডুবো ডুবো অবস্থায় চলাচল করে। বর্তমানে পণ্য বোঝাই করে একই কায়দায় চলাচল করছে ভলগেট। যা বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টির শংকা তৈরি করছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক ভলগেট ডুবেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।












