তারা পাঁচ ভাই। সামশু, সবুজ, সাইফুল ওরফে বার্মা সাইফুল, ফাহিম ও শাহিন। পিঠাপিঠি সবাই। পিতা নুরুল আলম কসাই। এক সময় মাংস বিক্রি করলেও এখন ছেলেদের কল্যাণে বেশ অর্থ-বিত্তের মালিক। ছোট ছেলের বিরুদ্ধে এখনও কোনো মামলা না থাকলেও বাকি চার ছেলের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা একাধিক। এর মধ্যে বড় ভাই সামশুর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১২টি। সবুজের বিরুদ্ধে ২১টি, সাইফুলের বিরুদ্ধে ১৮টি এবং ফাহিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
বায়েজিদ থানাধীন বার্মা কলোনি, আলী নগর, ফরেস্ট গেট এবং রংপুর কলোনির অলিখিত নিয়ন্ত্রক তারাই। কোনো ভাই কারো সাথে ঝামেলা করলে ছুটে আসেন অন্য ভাইয়েরা। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যান। বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে এলাকার ২৫/৩০টি ছেলে। গত ১৬ জুন গভীর রাতে নগরীর বায়েজিদ-ভাটিয়ারী লিংক রোডে পুলিশের চেকপোস্টে গুলি বিনিময়ের পর সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলকে (৩২) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ।
তিন ভাইয়ের তাণ্ডবের কথা স্বীকার করে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, দল ভারী হওয়ায় এলাকার মানুষ তাদের ত্রাসে ভিত। এলাকায় কেউ পানের দোকান দিলেও তাদের চাঁদা দিতে হয়। ভবন নির্মাণ করতে চাইলে তো কথাই নেই।
তিনি বলেন, আমি এক সময় এই থানার সাব-ইন্সপেক্টর ছিলাম। তখন থেকে এদের সম্পর্কে জানি। তাদের বাবা নিরীহ একজন মানুষ। কিন্তু ছেলেগুলো এতটাই নৃশংস যে, ছোটখাট অজুহাতেও তারা মানুষকে কুপিয়ে জখম করে। দুই মাসে সাইফুল অন্তত চারবার গ্রেপ্তার হলেও বারবার জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও অপরাধে জড়ায়। এবার ওসি হিসেবে এই থানায় যোগ দিয়ে দেখি, এদের দৌরাত্ম্যে অনেকটাই অসহায় এখানকার মানুষ।
সরেজমিনে জানা যায়, সরকারি জমি দখল করে বার্মা কলোনি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে বসবাসকারী বেশিরভাগই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এ কারণে এটি বার্মা কলোনি হিসাবে পরিচিত। ১৯৬৪ সালে নুরুল আলম কসাইয়ের বাবা মিয়ানমার থেকে এখানে এসে বসতি করেন। নুরুল আলম কসাই বায়েজিদ থানার পাশে মাংস বিক্রি করেন। কসাই হিসেবে তার সুনাম আছে। তার পাঁচ ছেলে ছোট থেকেই দুরন্ত স্বভাবের। কোনো কারণ ছাড়াই মারামারি করত। ছোট থাকতে সবাই ভাবত বাচ্চাদের দুষ্টুমি এসব। কিন্তু ১৬/১৭ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তাদের অপরাধ জগতে প্রবেশ। দুই ভাইকে নিয়ে সাইফুল এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। স্থানীয়রা তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে। বার্মা কলোনির সরকারি জমি তারা বিভিন্ন সময় মানুষের কাছে বিক্রিও করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমান আজাদীকে বলেন, সাইফুল কাউকে টার্গেট করলে প্রথমেই ৭/৮ জনকে পাঠিয়ে দেয় তার আশেপাশে অবস্থান করতে। তারা সিগন্যাল দিলে সাইফুল ঝড়ের গতিতে মোটরসাইকেলে আসে। টার্গেট করা ব্যক্তিতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চলে যায়।
ওসি বায়েজিদ বলেন, বর্তমানে এলাকাটা মোটামুটি শান্ত আছে। কারণ, সাইফুল আহত। তার মেঝ ভাই সবুজ ক’দিন আগে পাঁচলাইশ থানায় ধরা পড়েছে। আর বড় ভাই সামশু একটা মার্ডার কেইসের কারণে বর্তমানে বিদেশে পলাতক।












