বন্দর পতেঙ্গা এলাকার বিশ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য একশ বেডের একটি হাসপাতাল চালু হচ্ছে। বাংলাদেশ ইপিজেড কর্তৃপক্ষের তিনটি ভবনে অচিরেই এই হাসপাতাল চালু করা হবে। বন্দর পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেপজা কর্তৃপক্ষের পাঁচ একর জায়গাসহ এক লাখ ষাট হাজার বর্গফুটেরও বেশি আয়তনের তিনটি ভবন এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি জায়গা এবং ভবনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এই হাসপাতাল পরিচালিত হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, নগরীর দক্ষিণ হালিশহর এবং পতেঙ্গা এলাকার মাঝামাঝিতে র্যাব অফিসের সন্নিকটে বেপজা কর্তৃপক্ষের পাঁচ একর জায়গা রয়েছে। পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট আউটার রিংক রোডের সন্নিকটস্থ ভূমিতে বেপজা কর্তৃপক্ষ তৈরি পোশাক খাতের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ট্রেনিং সেন্টার এবং হোস্টেল নির্মাণ করে। নারী প্রজেক্ট নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বমোট ১২৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা ফাউন্ডেশনের ১ লাখ ২৮ হাজার বর্গফুটের দুইটি চারতলা ভবন এবং ৩৩ হাজার ৮৯৪ বর্গফুটের চার তলা ফাউন্ডেশনের অপর একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে গড়ে তোলা ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৯৪ বর্গফুট আয়তনের দুইটি চার তলা এবং একটি দোতলা ভবনে মহিলা শ্রমিকদের ট্রেনিং সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং ছয়শ’ মহিলার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সাল থেকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। এতে করে মহিলাদের হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত দুইটি বিশাল ভবন এবং ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত দোতলা ভবনটিসহ পুরো এলাকাটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
চমৎকার লোকেশনের পাঁচ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা নান্দনিক ভবন ৩টিতে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন বন্দর পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। বন্দর- পতেঙ্গা অঞ্চলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অন্তত বিশ লাখ মানুষ বসবাস করলেও এলাকায় কোন হাসপাতাল নেই। পতেঙ্গা এলাকা থেকে চমেক হাসপাতালে রোগী আনতে আনতে মারা যায়। যে কোনো ঘটনা দুর্ঘটনায় এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে বন্দর পতেঙ্গা এলাকায় একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছিল।
সাংসদ এম এ লতিফ পুরো বিষয়টি তুলে ধরে ভবন ৩টিসহ বেপজার ৫ একর জায়গা হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান। আবেদনে বলা হয় যে, শুধু জায়গা এবং ভবন দিলে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বাকি কার্যক্রম বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালনা করা হবে। এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উদাহারণ উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয় যে, জায়গা এবং ভবন ৩টি পাওয়া গেলে জনগণের টাকায় জনগণের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে স্বল্পমূল্যে মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে। এটি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, জনগণের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবেদনের প্রেক্ষিতে বেপজার পাঁচ একর জায়গা এবং ভবন ৩টি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য হস্তান্তর করতে বেপজা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর গতকাল এম এ লতিফ এমপি স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। এসময় বেপজার কর্ণফুলী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ এনামুলক হক, মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুল হক মিয়া, সদস্য কামরুল হাসান ভুলু, ৪১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সভাপতি সালেহ আহম্মেদ চৌধুরী, ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল বারেক, ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন কবি এবং স্বাধীনতা নারী শক্তির নেতৃবৃন্দ, ইপিজেড ও পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এম এ লতিফ এমপি বলেন, ৫ একর জায়গার উপর বেপজার মহিলা ট্রেনিং সেন্টারের ৩টি ভবন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য হস্তান্তর করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, বন্দর পতেঙ্গা এলাকার বিশ লাখেরও বেশি মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি হাসপাতালের অভাবে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দর পতেঙ্গা এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বিশেষ এই উপহার প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, এই হাসপাতাল শুধু পতেঙ্গা-হালিশহর জনগণই নয় কর্ণফুলী টানেল চালু হলে আনোয়ারা-বাঁশখালীর জনগণও উপকৃত হবেন। দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে এম এ লতিফ এমপি বলেন, সরকারি জায়গা এবং সরকারি ভবনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল পরিচালিত হবে। মা ও শিশু হাসপাতালের আদলে পরিচালিত হবে এই হাসপাতাল। এখানে স্বল্পমূল্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, সরকারি ৩টি ভবন রয়েছে। এই ৩টি ভবনে অচিরেই একশ’ বেডের হাসপাতাল চালু করা সম্ভব হবে। ক্রমান্বয়ে বেড সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
কর্ণফুলী ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক এনামুল হক বলেন, ভবন তিনটিতে মহিলা ট্রেনিং সেন্টার ও মহিলাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। ২০১৮ সালে ওই সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কিছু মেশিনপত্র রয়েছে। ওগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। সরকারি নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পতেঙ্গা এলাকার সমাজকর্মী মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসান গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। আমাদের এমপি সাহেবের এই উদ্যোগ বন্দর পতেঙ্গা এলাকার লাখো মানুষের একটি মৌলিক সংকটের সুরাহা করলো। তিনি দ্রুত হাসপাতালটি চালু করার আহ্বান জানান।