তিন বছর পর ফের সক্রিয় মানব পাচারকারী চক্র

এক মাসে ১৫ নারী ও ৩৭ পুরুষকে মিয়ানমারে বিক্রি কক্সবাজারে স্যাটেলাইট ফোন, বন্দুকসহ গ্রেপ্তার ৬

কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

তিন বছর ঝিমিয়ে থাকার পর নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাগর পথে মানব পাচারকারী চক্র। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রোহিঙ্গাদের মাঝে তৈরি হওয়া ‘হতাশা’ ও ‘অস্থিরতা’কে পুঁজি করে মার্চের মাঝামাঝি থেকে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে এই অপরাধী চক্র। ২০১৯ সালের পর এই নেটওয়ার্ক কার্যত নিস্ক্রিয় ছিল।
গতকাল শনিবার কঙবাজার র‌্যাব-১৫ এর একটি দল শহরের বাঁকখালী নদীতে অভিযান চালিয়ে ৬ মানব পাচারকারীকে তিনটি বন্দুক, চারটি গুলি, দুটি রামদা, একটি স্যাটেলাইট ফোন, একটি কম্পাস, একটি জিপিএস ও ১৬টি ফোনসহ গ্রেপ্তার করেছে। এরা গত এক মাসে ১৫ নারী ও ৩৭ জন পুরুষকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে মিয়ানমারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
র‌্যাব ১৫-এর অতিরিক্ত অধিনায়ক মেজর শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, গতকাল ভোরে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষকে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনা এলাকায় জড়ো করার খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। অভিযানের কথা জেনে দালালেরা ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ধাওয়া দিয়ে তাদের আটক করতে সক্ষম হন র‌্যাব সদস্যরা। পরে ট্রলার থেকে ৬ মানব পাচারকারীকে আটক করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া গেছে তিনটি বন্দুক, চারটি গুলি, দুটি রামদা, একটি স্যাটেলাইট ফোন, একটি কম্পাস, একটি জিপিএস কিট এবং পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের ফেলে যাওয়া ১৬টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিমকার্ড, একটি হাতঘড়ি ও ১ হাজার ২০০ টাকা।
আটককৃতরা হলো মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহিপাড়ার গোলাম কুদ্দুসের ছেলে মো. শাহজাহান (৩৭), কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা পূর্বপাড়ার নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. পারভেজ (২৩), একই এলাকার ফজল করিমের ছেলে আমির মো. ফয়সাল (২৪), আমির হোসেনের ছেলে মো. শাকের (৩০), মীর কাশেমের ছেলে রফিক আলম (৩৫) ও আমির হোসেনের ছেলে আব্দুল মজিদ (২৭)।
র‌্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ জানান, আটককৃতরা সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। কাউকে কাউকে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরা এ পর্যন্ত ৩৭ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারীকে মিয়ানমারে বিক্রি করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের লোকজনই তাদের প্রধান টার্গেট। এরা মালয়েশিয়ায় উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে তিন লাখ টাকার চুক্তিতে মানব পাচার করে আসছিল। তারা অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করত। তাদের বিরুদ্ধে পাচারের সময় নারীদের ধর্ষণ ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঙবাজার থানায় মামলার দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল উখিয়া উপজেলার ভূমি অফিসের সামনে থেকে স্থানীয় মানব পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় ভুক্তভোগী ৪৮ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার মানব পাচারকারী চক্রের সকল সদস্য উখিয়া-টেকনাফের বাসিন্দা। এর আগে ২৫ মার্চ অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাচারের সময় টেকনাফ উপকূল থেকে ৫৪ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় দুই দালাল ও তাদের স্থানীয় এক সহযোগীকেও আটক করা হয়। ২১ মার্চ সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে মালয়েশিয়াগামী ১৪৯ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে মহেশখালী থানা পুলিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্ত্রীকে হত্যার পর ইটভাটায় কাজ নিয়ে আত্মগোপন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬