মোতাওয়াল্লিদের অব্যবস্থাপনা, বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি কার্যকলাপের কারণে নগরীর শতবর্ষী আবদুল হামিদ সওদাগর ওয়াক্ফ এস্টেটের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওয়াক্ফ স্টেটের মোতাওয়াল্লিদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি বা অপসারণ চেয়ে করা একটি আবেদনের ওপর তদন্ত শেষে তদন্ত টিমের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াক্ফ স্টেটটি সম্পূর্ণভাবে একটি লিল্লাহ ওয়াক্ফ এস্টেট। এর একমাত্র বৃত্তিভোগী প্রতিষ্ঠান চন্দনপুরা জুমন সওদাগরের স্থাপিত মসজিদ। ওয়াক্ফ দলিলে মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেনের বেতন, রমজান মাসের হাফেজদের বেতন ও খোরাকি, মসজিদ মেরামত, ধর্মীয় কাজে এস্টেটের আয় খরচ করার নির্দেশ রয়েছে।
অথচ মসজিদ পরিচালনায় মোতাওয়াল্লিদের কোনো ভূমিকা নেই। মসজিদ পরিচালনা করেন স্থানীয় মুসল্লিরা। এছাড়া ওয়াক্ফ দলিলে তিন বছর পর পর মোতাওয়াল্লি নিয়োগের বিধান থাকলেও মো. শাহ নেওয়াজ নামের মোতাওয়াল্লি একটানা ৪৫ বছর মোতাওয়াল্লি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আরেকজন যুগ্ম মোতাওয়াল্লি জোবাইদুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করে আসছেন ১৯ বছর ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দুই মোতাওয়াল্লি অন্যায়ভাবে ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি ভাইবোনদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে অবৈধভাবে বিক্রয় করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বিপুল পরিমাণ আয় থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা হিসাব দাখিল করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওয়াক্ফ প্রশাসনকে বিপুল পরিমাণ ওয়াক্ফ চাঁদা থেকে বঞ্চিত করেছেন।
বর্তমান মোতাওয়াল্লিদের অপসারণ চেয়ে ২০২১ সালে করা আবেদনটি করেছিলেন এস্টেটের স্বত্বভোগী মো. তাজুল ইসলাম কামাল। মরহুম আবদুল হামিদ তার দাদা। আবেদনে মো. তাজুল ইসলাম কামাল নিজেকে মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করার জন্যও আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ওয়াক্ফ প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেয়। তদন্ত শেষে উক্ত তদন্ত টিম ২০২৩ সালের ৬ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত টিম উল্লেখ করে, ওয়াক্ফের ওয়ারিশরা বর্তমানে দুই গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপে মো. শাহ নেওয়াজ এবং অপর গ্রুপে আছেন জোবাইদুল ইসলাম। শাহ নেওয়াজ গ্রুপে তিনজন আর জোবাইদুল ইসলাম গ্রুপে ৯ জন ওয়ারিশ আছেন। এর মধ্যে আবেদনকারী তাজুল ইসলাম কামাল এবং তার ভাই মাইনুল ব্যতীত সকলে কোনো না কোনোভাবে ওয়াক্ফ সম্পত্তির সুবিধা ভোগ করছেন।
প্রতিবেদন বলা হয়, তাজুল ইসলাম কামাল একজন ধার্মিক ব্যক্তি। তার দ্বারা এস্টেটের কোনো ক্ষতি হয়নি। মোতাওয়াল্লি কার্য পরিচালনার জন্য তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি। বর্তমান দুই যুগ্ম মোতাওয়াল্লির অব্যবস্থাপনা, বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি কার্যকলাপের কারণে শতবর্ষী এ ওয়াক্ফ এস্টেটের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় ওয়াক্ফ এস্টেটের অস্তিত্ব রক্ষা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও একমাত্র বৃত্তিভোগী প্রতিষ্ঠান মসজিদটি পরিচালনার লক্ষ্যে ওয়াক্ফ অধ্যাদেশ ১৯৬২–এর ৩২ (১) ধারা অনুযায়ী বর্তমান মোতাওয়াল্লিদেরকে অপসারণ করে তার স্থলে আবেদনকারী তাজুল ইসলামকে কামাল মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে মো. তাজুল ইসলাম কামাল আজাদীকে বলেন, আমার দাদা আবদুল হামিদ সওয়াবের উদ্দেশ্যে কিছু শর্তসাপেক্ষে ওয়াক্ফ এস্টেটটি সৃজন করেছিলেন। দুঃখের বিষয়, বর্তমান মোতাওয়াল্লিরা যোগসাজসে অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে আসছেন। নিয়মনীতি ভঙ্গ করে ওয়াক্ফ সম্পত্তি তছরূপ করে আসছেন। ওয়াক্ফ প্রশাসনকে ওয়াক্ফ সম্পত্তির সঠিক হিসাব প্রদান করেননি। আত্মসাৎ করেছেন ওয়াক্ফ এস্টেটের আয়। এসব কারণে আমি তাদের অপসারণ চেয়েছি। পাশাপাশি পূর্বপুরুষের প্রতিষ্ঠিত ওয়াক্ফ এস্টেটটি যাতে বিলুপ্ত হতে না পারে সেজন্য তার শাসন, সংরক্ষণ, পরিচালনা ও উন্নয়ন করার জন্য আমাকে মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করতে আবেদন করেছি। ওয়াক্ফ প্রশাসনও বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে। ওয়াক্ফ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমাকে মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করা যেতে পারে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এখন বিষয়টি ওয়াক্ফ প্রশাসনের হাতে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর অনেক সময় অতিবাহিত হলেও এখনো কেন তাকে মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করা হয়নি? জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, আমারও একই প্রশ্ন, কেন এখনো আমাকে মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করা হচ্ছে না?