নির্মাণের বছর তিনেক না পেরুতেই বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও আধুনিক পৌর বাস টার্মিনালে সংযোগ স্থাপনে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন টানেলের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে পড়ছে। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা সাড়ে পাঁচশ ফুটের দীর্ঘ টানেলের একাধিক স্থানে জোড়া ছিদ্র দিয়েই প্রতিনিয়ত পানি গড়িয়ে পড়ায় টানেলটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এদিকে টানেলের শেষপ্রান্তে স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে পাহাড় ধসে পড়ে টানেলটির ঐ পথটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় মোহাম্মদ সাঈদ, খলিলুর রহমান, রাজিয়া খাতুন অভিযোগ করে বলেন, টানেল নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটায় জায়গাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে টানেলের শেষপ্রান্তে ভেঙে পড়ে কাটা পাহাড়ের অংশবিশেষ। টানেলের ভিতরেও ঢালাইয়ের জোড়ার ছিদ্রগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে পড়ে সবসময়। এতে সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণ ও সাঙ্গু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টানেলটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে এগারো কোটি টাকায় সাড়ে পাঁচশ ফুটের দীর্ঘ টানেল, প্রতিরক্ষা দেওয়াল, ড্রেনসহ দৃষ্টিনন্দন টানেলটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম ট্রেডার্সের লাইসেন্সে সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের ঘনিষ্ঠজন রাজু বড়ুয়া। কার্যাদেশ মোতাবেক ২০১৮–১৯ অর্থবছরে টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম দফায় তিনশ ফুট টানেলের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও দ্বিতীয়, তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে সাড়ে ৫শ ফুট দৈর্ঘের টানেলের ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি টাকা। তৃতীয় দফায় প্রকল্পের অর্থ ও মেয়াদ বাড়ানোর পর ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলে বরাদ্দের অর্থ প্রাপ্তিতে ধীরগতি এবং ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে টানেলটি নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ বছর। ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর টানেলের উদ্ধোধন করে বীর বাহাদুর উশৈসিং। মূলত পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে আধুনিক নতুন পৌর বাস টার্মিনালে সংযোগ স্থাপন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে রুমা, থানচি দুটি উপজেলায় পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে টানেলটি নির্মাণ করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াছির আরাফাত বলেন, টানেলটি পর্যটন নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন, যানজট নিরসন, বিকল্প সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে পাঁচশ ফুট দীর্ঘ টানেলটি নির্মাণ করা হয়। তবে নির্মাণ কাজে অনিয়মের প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, টানেলের ছাদের ওপরে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপলাইন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় টানেলের ছাদ থেকে ভিতরে পানি পড়ছে। টানেলের ভিতরে আলোকিত করতে লাগানো লাইটিংয়ের তারও চুরি হয়েছিল, কয়েকদিন আগে নতুন তার লাগিয়ে আলো জ্বালানো হয়েছে টানেলের ভিতরে। খুব দ্রুতই টানেলটি সংস্কার করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।