তিন বছর ধরে ‘অধরা’ পাসপোর্টের নাগাল দুদিনেই

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

তিনবছর আগে (২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর) মা ডলি বড়ুয়ার নামে পাসপোর্ট করতে দেন রিপন বড়ুয়া। তাদের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার নজরের টিলায়। নিয়ম মতে নির্ধারিত অংকের (৩ হাজার ৪৫০ টাকার) ব্যাংকে ফি জমা দেন। ব্যাংকে ফি জমাদানের স্লিপসহ আবেদনটি তিনি মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত কাউন্টারে জমা দেন। কাউন্টারে এনরোলমেন্টে দায়িত্বরত স্টাফ মনিরুল মোস্তফা ডলি বড়ুয়ার ব্যাংকে ফি পেমেন্ট রেফারেন্স নম্বরটি ভুলবশত অন্য এক ব্যক্তির আবেদনে ব্যবহার করে ফেলেন। যা রিপন বড়ুয়া জানতেন না। পাসপোর্ট প্রদানের (ডেলিভারির) সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর। কিন্তু নির্ধারিত দিনে গিয়ে মায়ের পাসপোর্ট পান নি রিপন। এরপর থেকে নিয়ম করে প্রায় তিন বছর ধরে (চলতি বছরের ২৬ জুলাই পর্যন্ত) পাসপোর্ট অফিসে ধর্ণা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু পাসপোর্ট পান নি। রিপন বড়ুয়ার অভিযোগ- সর্বশেষ ২৬ জুলাই পুনরায় ব্যাংক ফি জমা দিতে বলা হয়েছে তাকে। কিন্তু এতো দিন পাসপোর্ট না পাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পারেন নি তারা।

এতে তার মা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গতকাল দুদকের গণশুণানিতে এ অভিযোগ করেন রিপন বড়ুয়া। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ বীর উত্তম মিলনায়তনে এ গণশুণানির আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। এই অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে মঞ্চে আসেন মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এনায়েত উল্লাহ।

শুণানিতে তিনি বলেন, ওই ভুক্তভোগী আমাদের কাছে আসেনি। এরকম যে কোন সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসলে আমরা সেটি সমাধান করে দিই। সুরাহার চেষ্টা করি। কিন্তু এই সমস্যাটি নিয়ে ভুক্তভোগী আমাদের সাথে দেখা করেনি। এরপরও এখন যেহেতু বিষয়টি আমরা জানলাম- সর্বোচ্চ ৩ দিনের মধ্যে তার পাসপোর্ট প্রদানে আমরা ব্যবস্থা নিবো। আশা করছি, ৩ দিনের মধ্যেই তার পাসপোর্ট হাতে পাবে। তবে ৩ দিনের পরিবর্তে ২ দিনের মধ্যেই পাসপোর্টটি প্রদানে ব্যবস্থা নিতে বলেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। পরে ২ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এনায়েত উল্লাহ।

মনসুরাবাদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. আবু সাঈদ দেশের বাইরে থাকায় সহকারী পরিচালক শুনানিতে প্রতিনিধিত্ব করেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনরোলমেন্টকালীন ভুল করা পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী মনিরুল মোস্তফার পকেট থেকেই রিপন বড়ুয়ার মায়ের আবেদন বাবদ ব্যাংকে ফি পরিশোধ করা হবে। অর্থাৎ মায়ের পাসপোর্ট আবেদন বাবদ রিপন বড়ুয়াকে পুনরায় ব্যাংক ফি জমা দিতে হবেনা। আর দুুদিনের মধ্যেই ভুক্তভোগী পাসপোর্ট হাতে পাবে বলে নিশ্চিত করেছেন পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এনায়েত উল্লাহ।

আরো কয়েকজন পাসপোর্ট প্রাপ্তি নিয়ে অভিযোগ করেন শুনানিতে। এসব অভিযোগের জবাব দেন মনুসরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এনায়েত উল্লাহ ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাসুম হাসান। এদের মধ্যে সুরাহাযোগ্য বিষয়গুলোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন দুদক কমিশনার। কিন্তু বড় ধরণের তথ্য পরিবর্তন বা তথ্য গড়মিলের ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। সবমিলিয়ে চারটি অভিযোগ আসে পাসপোর্ট অধিদপ্তর নিয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনার্স কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার হয়রানি, সেবায় অবহেলা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রশাসন করল বহিষ্কার বিভাগ নিল পরীক্ষা