অনাবাদি জমি চিহ্নিতকরণ ও খাসকরণ কাজ শুরু হয়েছে বিভিন্ন উপজেলায়।
চন্দনাইশ : চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার উপজেলার সাতবাড়িয়া ও দোহাজারী তফসিলের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন জমি পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাছরীন আক্তার। এসময় তিন বছরের বেশি সময় ধরে অনাবাদি পড়ে রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি জমি চিহ্নিত করে লাল পতাকা এবং সতর্কতা বার্তা সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া এই ব্যাপারে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। একইসাথে অনাবাদি জমিতে দ্রুত চাষাবাদ শুরু করতে স্থানীয় জনগণকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিমরান মোহাম্মদ সায়েকসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাছরীন আক্তার জানান, প্রধামন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে- জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং কোনো জমিই আবাদের বাইরে রাখা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চন্দনাইশে অনাবাদি জমি চিহ্নিতকরণ ও খাসকরণের কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরিদর্শনের সময় যে সমস্ত আবাদযোগ্য জমি বিগত ৩ বছর ধরে অনাবাদি রয়েছে সে সমস্ত জমি চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৯২ (১) (গ) ধারা মোতাবেক খাস করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই অভিযান নিয়মিত চলবে বলেও জানান তিনি।
লোহাগাড়া : লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, লোহাগাড়ায় কৃষি জমি অনাবাদি রাখায় ২ একর ৫১ শতক জায়গা সরকারি খাস খতিয়ানভুক্তির প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন এসব জমিগুলো খাস করার নিমিত্তে লাল পতাকা উত্তোলন করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
জানা যায়, বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশসহ চলমান বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব সব দেশে পড়েছে। আর এ সংকট মোকাবেলায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। ইতোপূর্বে বিভিন্নভাবে বিষয়টি অবহিত করা হলেও জমি অনাবাদি রাখায় উপজেলা প্রশাসন ও রাজস্ব প্রশাসনের উদ্যোগে এই কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯২(১)(গ) ধারা অনুযায়ী কোনো কৃষিজমি পরপর তিন বছর অনাবাদি রাখা হলে তা খাস করার বিধান রয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন সময় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বস্তরের ভূমি মালিককে অবহিত করা হয়েছে। তারপরও অনাবাদি রাখায় ২ একর ৫১ শতক জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্তির প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ভূমি মালিকদের পতিত জমি কৃষি উপযোগী করে চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তিনি জানান, খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হলে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিধিমালা অনুযায়ী বন্দোবস্ত কার্যক্রম, গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্প সৃজনসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
বাঁশখালী : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীতে অনাবাদি জমি খুঁজে বের করে সে তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালীপুর ও বৈলছড়ির বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে বেশ কয়েকটি অনাবাদি জমিতে লাল পতাকা সতর্কতা ব্যানার টাঙিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান সহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগনকে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ও অনাবাদী পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ি, কালীপুর, পুকুরিয়া, গুনাগরি, সাধনপুর ইউনিয়নসহ সকল ইউনিয়নে তিন বছরের অধিক সময় ব্যক্তি মালিকানাধীন অনাবাদি জমিতে সতর্ক বার্তা স্বরূপ লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতি শিগগিরই সমগ্র বাঁশখালী উপজেলায় তিন বছরের অধিক সময় অনাবাদি সকল জমি খাস করার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জান চৌধুরী বলেন, চাষযোগ্য জমি অনাবাদি ফেলে রাখা যাবে না। জমির শ্রেণি অনুযায়ী ফসল উৎপাদন করতে হবে। কোনো কৃষি জমি পরপর ৩ বছর অনাবাদি থাকলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার বিধান রয়েছে। কোনো ব্যক্তি তার জমি কৃষি কাজে ব্যবহার না করে পতিত রাখলে উক্ত জমি রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯২ (১)(গ) ধারা মোতাবেক খাস করণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে গতকাল প্রশাসনের পক্ষ বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিদর্শন করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়াতে টনক নড়েছে যারা দীর্ঘ সময় ধরে জমি পতিত রেখেছে তাদের।