মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, মহামায়া বুনো ঝর্ণাগুলো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে পর্যটকরা। তবে পাহাড়ের শরীর লেপটে টলমলে স্বচ্ছ পানির ধারা গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য দেখতে গিয়ে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। মূলত বর্ষায় অসতর্কতার কারণে ঝরে যাচ্ছে এসব তাজা প্রাণ। এছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রকৃতিপ্রেমীরা অনেক সময় জীবনের ঝুঁকিও নিয়ে ফেলেন।
অন্যদিকে এসব ঝর্ণায় রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা, সেসব নিয়ে পর্যটকদের রয়েছে অসন্তোষ প্রকাশ। তবুও সৌন্দর্য উপভোগে ছুটে আসা পর্যটকদের মধ্যে গত তিন বছরে মৃত্যু হয়েছে ১৬ পর্যটকের। কিন্তু এত দুর্ঘটনার পরেও টনক নড়েনি প্রশাসন কিংবা ইজারাদার কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে এখানকার পাহাড়ি মাটি ও শ্যাওলাযুক্ত পাথরগুলো অনেক বেশি পিচ্ছিল হয়ে যায়। তবে বর্ষায় জলের স্তর অনেক বেড়ে যায় বলে ঝর্ণাগুলো দেখতে বেশ সুন্দর দেখায়। মূল ঝর্ণাস্থলে যাওয়ার রাস্তা অধিকাংশই ঝিরি পথ। তাই অনেক সময় ঝর্ণায় পৌঁছানোর ঝিরি পথ হাঁটু সমান পানিতে ডুবে থাকে। আবার ভারী বর্ষণে পানি বেড়ে কোমর সমান হয়ে যায়। পথ হয়ে যায় চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ঝর্ণার দৃশ্য দেখতে চূড়ায় ওঠার সময় পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঝুঁঁকিপূর্ণ পাহাড়ি লোকেশনে নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত সতর্কবার্তা, গাইড দ্বারা নিয়ন্ত্রণ, নেই নির্দেশনা সতর্কীকরণ। ফলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ পথে দর্শনার্থী আগন্তুকদের অসতর্কতার জন্য প্রতিবছর ৫-৭ জন পর্যটক প্রাণ হারান, আহত হন অর্ধশতাধিক। সর্বশেষ গত ১৯ জুন নাপিত্তাছরা ঝর্ণা দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী দুই সহোদরসহ তিন বন্ধু। ওইদিন সন্ধ্যায় ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্তের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরে পাওয়া যায় অন্য দুজনের মরদেহ। এদিকে চলতি বছর প্রায় ২৮ লাখ টাকায় টিএস আর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঝর্ণাগুলো ইজারা দেয়া হয়। জনপ্রতি পর্যটকের কাছ থেকে নেয়া হয় ২০ টাকা। ইজারা দেয়া হলেও বন বিভাগ ও ইজাদারের উদাসীনতায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ঝর্ণাগুলো ইজারা দেয়া হলেও পর্যটকদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা রাখেনি ইজারাদার ও বন বিভাগ। তাই আগামীতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে ঝর্ণাগুলো ইজারা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।