জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার অধীন চট্টগ্রামের জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে গত তিন বছর তিন মাসে সেবা পেয়েছেন ৭ হাজার ১৩৬ জন সেবাপ্রার্থী। এর মধ্যে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিয়ার) মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন ১৯৭৮ জন। মামলায় আইনি সহায়তা পেয়েছেন ৪ হাজার ৮২৯ জন এবং ৩২৯ জন নারী–পুরুষ আইনি পরামর্শ পেয়েছেন। জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে প্রাপ্ত কাগজপত্রে উঠে আসে এ তথ্য। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে এডিয়ারের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন ৪০৩ জন।
মামলায় আইনি সহায়তা পেয়েছেন ১২২৮ জন। আইনি পরামর্শ পেয়েছেন ৮২ জন নারী–পুরুষ। ২০২১ সালে এডিয়ারের মাধ্যমে ৫৬৬ জন সেবা পেয়েছেন। মামলায় আইনি সহায়তা পেয়েছেন ১২৮৯ জন। আইনি পরামর্শ পেয়েছেন ৭৫ জন নারী–পুরুষ। ২০২২ সালে এডিয়ারের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন ৮১৮ জন। মামলায় আইনি সহায়তা পেয়েছেন ২০১২ জন। আইনি পরামর্শ পেয়েছেন ১৫৫ জন নারী–পুরুষ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এডিয়ারের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন ১৮৮ জন। মামলায় আইনি সহায়তা পেয়েছেন ৩০০ জন এবং আইনি পরামর্শ পেয়েছেন ১৭ জন নারী–পুরুষ।
লিগ্যাল এইড অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২০ সালে লিগ্যাল এইডের সহায়তায় পরিচালিত মামলার মধ্যে ৭২০ টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। ২০২১ সালে নিষ্পত্তি করা হয় ৫২১ টি মামলা। এছাড়া ২০২২ সালে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৬৩ টিতে। চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে নিষ্পত্তি করা হয় ৮১ টি মামলা। সেই হিসেবে গত তিন বছর তিন মাসে লিগ্যাল এইডের সহায়তায় পরিচালিত মামলার মধ্যে মোট ১৯৮৫ টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে লিগ্যাল এইড অফিস।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিয়ার) মাধ্যমে ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রদান করা হয়েছে। একই ভাবে ২০২১ সালে ৮৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং ২০২২ সালে ৭৫ লাখ ১১ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রদান করা হয় ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। সব মিলে গত তিন বছর তিন মাসে এডিয়ারের মাধ্যমে দুই কোটি ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রদান করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো দেখা যায়, মামলায় না গিয়ে ফ্রি–কেইসের মাধ্যমে ২০২০ সালে বিরোধ মীমাংসার মাধ্যমে উপকারভোগ করেছেন ৯৩ জন নারী, ৯৩ জন পুরুষ ও ১১০ জন শিশু। একইভাবে ২০২১ সালে উপকার ভোগ করেছেন ১৪৪ জন নারী, ১৫১ জন পুরুষ ও ১৩০ জন শিশু। ২০২২ সালে ১৮০ জন নারী, ১৮৮ জন পুরুষ ও ১৩০ জন শিশু এবং চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ২০ জন নারী, ২২ জন পুরুষ ও ১০ জন শিশু মামলায় না গিয়ে ফ্রি–কেইসের মাধ্যমে উপকারভোগ করেছেন। এসব ফ্রি–কেইস বিরোধের ধরণের মধ্যে যেমন রয়েছে ফৌজদারি ও পারিবারিক বিরোধ, তেমই রয়েছে দেওয়ানি বিরোধ।
লিগ্যাল এইড অফিস সূত্র জানায়, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড অফিস আইনগত বিষয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সেমিনার, কর্মশালা, উঠান বৈঠক, প্রাতিষ্ঠানিক গণশুনানি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে দুটি মাসিক সভা আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, লিগ্যাল এইড অফিসে বর্তমানে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২৩৫টি আবেদন রয়েছে। পোস্ট–কেইস বিরোধ (আদালত থেকে মীমাংসা করার জন্য পাঠানো হয়) মীমাংসার জন্য রয়েছে ১২টি।
চট্টগ্রাম লিগ্যাল এইড অফিসের অফিস সহকারী মো. এরশাদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ আইন অনুযায়ী জেলা লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই আইন অনুসরণ করে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে সরকারি আইনগত সহায়তা সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে জনগণের আস্থায় পরিণত হয়েছে জেলা লিগ্যাল এইড। জনগণ যাতে তাদের সম্যার কথা দ্রুত জানাতে পারে সেজন্য চালু রয়েছে ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড হেল্প ডেস্ক, স্থাপন করা হয়েছে হটলাইন। ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন দিয়ে যে কেউ লিগ্যাল এইড সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
আদালতের উপর চাপ কমছে উল্লেখ করে মো. এরশাদুল ইসলাম বলেন, আদালতে অনেক মামলা। প্রতিদিন সেখানে নতুন নতুন অসংখ্য মামলা যুক্ত হচ্ছে। লিগ্যাল এইড চালু হওয়ার পর থেকে কিছু বিষয় বাইরে মীমাংসা হয়ে যাচ্ছে, মামলায় যেতে হচ্ছে না। সরকার এ জন্যই জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা গড়ে তুলেছে। যা বর্তমানে সারাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। সুফল ভোগ করছে আর্থিকভাবে অসহায়–সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীরা। জেলা লিগ্যাল এইড অফিস জানায়, আদালতে দায়েরকৃত, দায়েরযোগ্য ও বিচারাধীন মামলায় আইনগত সহায়তা প্রদান, সালিশি সেবা প্রদান ও আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে আইনজীবীর সম্মানী প্রদান করে আসছে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা।