তিন বখাটের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনা ও ধর্ষণ মামলা

পেকুয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহনন

চকরিয়া ও পেকুয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৯ জুলাই, ২০২১ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

পেকুয়ার রাজাখালীর হাজিপাড়ার মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ পরবর্তীতে বিষপানে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে অবশেষে তিন বখাটে-ধর্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। আত্মহনন করা শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় নতুন করে এজাহার জমা দিলে তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এতে ভুক্তভোগী পরিবার, স্বজনসহ এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এর আগে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে বুধবার বিকেলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, শিক্ষার্থীর মা, বাবা, ভাইসহ পাড়া-প্রতিবেশী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা শোনেন। এরপর বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে নির্দেশনা মোতাবেক বুধবার রাতেই থানায় উক্ত মামলা হয়।
পুলিশ জানায়, ওই শিক্ষার্থী বিষপানে আত্মহননের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের রেকর্ড অনুযায়ী প্রথমে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নেয়া হয়। অবশ্য ওই শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করার বিষয়টি প্রকাশ পেলে সেই ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়- নতুন করে অপহরণ, ধর্ষণ, আত্মহত্যায় প্ররোচনার অপরাধ ও সহায়তার অপরাধের ধারায় মামলা নেয়ার। অবশেষে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩) এর ৭/৯(১)/৯ক/৩০ ধারায় মামলা করা হয়েছে থানায়। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার।
মামলার আসামিরা হলেন- বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের হলুরঘাট ওয়াইজপাড়ার মকসুদ আহমদের ছেলে আবুল কাশেম (২০), পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের মিয়ারপাড়ার মৃত আবুল হোসেন প্রকাশ বাদশার ছেলে আলমগীর (২২) ও হাজিরপাড়ার নুরুল হকের ছেলে রবিউল আলম (১৯)।
মামলার পর শিক্ষার্থীর বাবা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমার সন্তানের ওপর যে পাশবিক ঘটনা ঘটেছে, সেসব অভিযোগে নতুন করে মামলা নেয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। এতে পুলিশের প্রতি আমাদের আস্থা অনেকগুণ বেড়ে গেল।’
তিনি বলেন, ‘এবার পুলিশ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারে আন্তরিকতা দেখাবে এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে তদন্ত কার্যক্রমসহ অভিযোগপত্র দাখিল করবে। যাতে আর কোন বাবা-মায়ের বুক খালি করতে না পারে কেউ।’
চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিষপানের ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা নেয়া হলেও ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ্য হওয়ায় পুলিশ গভীরভাবে তদন্তে নামে। সেই তদন্তে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় তিন বখাটের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করতে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় নির্দেশনা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মামলা করা হয়েছে থানায়।’
এ ব্যাপারে কঙবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর ওপর যা যা ঘটনাই ঘটেছে সরেজমিন সবিস্তারে তথ্য সংগ্রহের পর মামলা করা হয়েছে। ঘটনা যা-ই ঘটেছে এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন সঠিক নিয়মেই চলবে। সংঘটিত হয়ে যাওয়া কোন ঘটনা লুকানোর সুযোগ পুলিশের কাছে নেই। অতএব আসামি গ্রেপ্তারসহ পরবর্তী সকল পদক্ষেপ আইনানুগভাবে গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার হাজিপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে রাজাখালী বহুমুখী বেশারাতুল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে গভীর রাতে বাড়ির জানালা ভেঙে তুলে নিয়ে যায় তিন বখাটে। এ সময় পাশের রুমে থাকা বড়ভাইকে দরজার ছিটকিনি দিয়ে আটকে রাখা হয়। পাশের মিয়াপাড়া নুরুন নাহার চৌধুরাণী জামে মসজিদ ও কবরস্থানের পুকুরের টং ঘরে নিয়ে শিক্ষার্থীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। এ ঘটনার পর অপমানে বিষপানে আত্মহননের পথ বেঁছে নেয় ওই শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় দুই সন্তানকে নিয়ে মা, বাবা ছিলেন বাঁশখালীর পুঁইছড়ির আত্মীয় বাড়িতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিগগিরই অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ : স্বাস্থ্য বিভাগ
পরবর্তী নিবন্ধফেরত আসা ২ লাখ প্রবাসী পাচ্ছেন সম্মানী