অবশেষে দেশের গ্যাসের ন্যাশনাল গ্রিডের ফুটো বন্ধ করে ৫শ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। একটি চীনা কোম্পানি কারখানার ভবন নির্মাণের পাইলিং করার সময় ড্রিল করতে গিয়ে গ্যাসের ন্যাশনাল গ্রিড ছিদ্র করে দেয়। মাটির ৩০ ফুটেরও বেশি গভীরে থাকা ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ন্যাশনাল গ্রিডের আনোয়ারা–ফৌজদারহাট পাইপ লাইন ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ছাড়া সারাদেশে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। চীনা ইকোনমিক জোনে গত ৯ জুলাই সংঘটিত এই ঘটনার পর তিন দিনের চেষ্টায় গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনের বেশ বড়সড় ছিদ্র জোড়া দেয়ার পর গতকাল সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। আজ সকালের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের গ্যাস সেক্টর আমদানিকৃত এলএনজির উপর বেশ নির্ভরশীল। বর্তমানে মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের অন্তত ৩০ শতাংশ এলএনজি। মহেশখালী থেকে আনোয়ারা হয়ে ফৌজদারহাটে ন্যাশনাল গ্রিডে যুক্ত এলএনজি সরবরাহ পাইপ লাইন।
গত ৯ জুলাই কর্ণফুলী নদীর আনোয়ারা প্রান্তে গ্যাস সঞ্চালন সংস্থা জিটিসিএলকে কিছুই না জানিয়ে তাদের ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপের ওপর চীনা কোম্পানির নিয়োগ করা একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খননকাজ চালাতে গিয়ে সেটি ছিদ্র করে ফেলে। এতে শুরুতে বিপুল পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ন্যাশনাল গ্রিডে এসএনসির সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে চট্টগ্রাম ছাড়া সারাদেশে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। মহেশখালিস্থ টার্মিনাল থেকে ওই সময় ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট হিসেবে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল। ন্যাশনাল গ্রিড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধুমাত্র চট্টগ্রামের জন্য ২৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়ার মাধ্যমে মহেশখালী–আনোয়ারা লাইন চালু রাখা হয়।
ন্যাশনাল গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকাসহ সর্বত্র গ্যাসের হাহাকার শুরু হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় গ্যাস নির্ভর শিল্প এবং সিএনজি রিফুয়েলিং।
আনোয়ারা–ফৌজদারহাট ন্যাশনাল গ্রিড লাইন ফুটো হয়ে যাওয়ার পর এটি মেরামতে কাজ শুরু করে জিটিসিএল। তিনদিনের চেষ্টায় গতকাল সকালে লাইনটির মেরামত সম্পন্ন হয়। গতকাল (শুক্রবার) সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ন্যাশনাল গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়। শুরুতে স্বল্প পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ দিয়ে কমিশনিং করে বিকেলে গ্যাসের প্রবাহ বাড়ায় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (জিটিসিএল)। গতরাতে ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল বলে জানিয়ে সূত্র বলেছে যে, আজ সকালের মধ্যে সরবরাহ ৭শ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ ও গ্যাস গ্রিডের প্রেসারের (বর্তমান ৭০ পিএসআই) সঙ্গে সিঙ্ক্রোনাইজ করে পর্যায়ক্রমে গ্যাস সঞ্চালন ও চাপ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ সাংবাদিকদের জানান, গত ৯ জুলাই কর্ণফুলী নদীর আনোয়ারা প্রান্তে জিটিসিএল এর অজ্ঞাতে খননকাজ চালাতে গিয়ে একটি গ্যাস সঞ্চালন পাইপে ছিদ্র করে ফেলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে ৫০০ মিটার দূরে মাটির ১০ মিটার গভীরে পাইপ লাইনটির অবস্থান বলেও তিনি জানান।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইতোমধ্যে সকল পাইপলাইনের ম্যাপ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, ম্যাপ হাতে থাকলে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটবে না। গ্রাহক ভোগান্তি লাঘব করতে নিয়মিত মনিটরিং বাড়ানোর জন্য মন্ত্রী নির্দেশ প্রদান করেছেন।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) তথ্য মতে, চট্টগ্রামের ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহক, ৬০টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন এবং ছোট, মাঝারী এবং বড় মিলে প্রায় ১ হাজার ২০০ শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪শ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে গতকাল চট্টগ্রামে দেয়া হয় প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে বহুজাতিক সার কারখানা কাফকোতে ৪২ মিলিয়ন ঘনফুট, বন্ধ হয়ে থাকা সিইউএফএল সার কারখানায় ৬ মিলিয়ন ঘনফুট, শিকলবাহা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে। চট্টগ্রামের শিল্প কারখানায়গুলোতে প্রায় ১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।