দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজার, যার একদিকে বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সৈকত, অপরদিকে পাহাড়। এ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর কক্সবাজারে ছুটে আসেন লক্ষ লক্ষ ভ্রমণপিপাসু মানুষ। আর এসব মানুষকে মানসম্মত সেবা দিতে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক হোটেল–মোটেল, ২ সহস্রাধিক রেস্তোরাঁ ও দোকানপাটসহ হাজার হাজার মানুষের জীবিকাক্ষেত্র। দেশের লক্ষ লক্ষ ভ্রমণপিপাসু মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় হাজার হাজার পরিবারেও প্রশান্তি আনছে এই পর্যটন ক্ষেত্র। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে পিক সিজন এবং বর্ষাকালীন সময়কে অফসিজন বা মন্দা মৌসুম হিসাবে ধরা হয়। এরপরও বর্ষাকালে সরকারি ছুটির দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার এবং অফিস খোলার দিনে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। তবে রোদ–বৃষ্টি যাই হোক, প্রতিবছর দুই ঈদ ও থার্টিফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেল–মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। এসব হোটেলে প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক রায়হান উদ্দিন আহমদ বলেন, একসময় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাস পর্যটন মৌসুম এবং বছরের বাকী সময়কে মন্দা মৌসুম হিসাবে ধরা হতো। কক্সবাজার চেম্বার প্রেসিডেন্ট আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, মাত্র ৩ দশক আগেও কঙবাজারে ৫ হাজার পর্যটক থাকার মতো সুবিধা ছিল না। এখন থাকতে পারে লক্ষাধিক পর্যটক। তখন তিন তারকা হোটেল শৈবাল ছাড়া কোন তারকা হোটেল ছিল না, এখন রয়েছে অনেক পাঁচ তারকা হোটেলসহ মানসম্মত কয়েক শত হোটেল। তখন সপ্তাহে মাত্র ২টি ফ্লাইট চলত। আর এখন চলে দৈনিক ২০/২২ টি ফ্লাইট। এছাড়া গত বছর থেকে চালু হয়েছে রেল লাইনও।
তিনি বলেন, তখন কেবল শীত মৌসুমেই পর্যটকের আনাগোনা চোখে পড়তো। এখন সারা বছরই পর্যটক থাকে। তখন শহর সংলগ্ন একটি ছোট লাবণী সৈকতে বেড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু কক্সবাজার–টেকনাফ পর্যন্ত সাগর তীর ধরে ৮৪ কি.মি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক বদলে দিয়েছে কক্সবাজারের পর্যটনের শিল্পকে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেল–মোটেল–গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার মনে করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার উপরই নির্ভর করছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যত। তিনি বলেন, মানুষ যদি মন খুলে–নির্ভয়ে কক্সবাজারের আনাচে–কানাচে, বনে বাদাড়ে ঘুরতে পারে, তাহলে কঙবাজার হবে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র।