তিন দফা প্রজ্ঞাপনের পরেও প্লাস্টিক বস্তায় পণ্য পরিবহণ

প্রশ্নের মুখে পাটের বহুমুখী ব্যবহার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

তিন দফা প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিসহ ১৯ পণ্য পাটের বস্তায় পরিবহন ও মজুদকরণ বাধ্যতামূলক করে সরকার। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর অনিচ্ছা এবং প্রশাসনের তদারকির অভাবে বাজার এখনো প্লাস্টিক বস্তার দখলে। এতে করে পাটের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগটাও অনেকটা ভেস্তে যাচ্ছে। চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীর চালের আড়তদাররা জানান, মাঝে মাঝে প্লাস্টিক বস্তার ব্যবহার কমে যায়। তবে এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে আবার ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিক বস্তায় পণ্য পরিবহন শুরু করে দেয়। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলেও কয়েকটি অঞ্চল থেকে পাটের বস্তায় পণ্য আসছে। তবে তা পরিমাণে অনেক কম। শুধু ধান চাল নয় দেশের মোট ভোগ্যপণ্যের ৯০ শতাংশই পরিবহন ও মজুদ হচ্ছে প্লাস্টিক বস্তায়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে একটি পাটের বস্তার দাম পড়ছে প্রায় ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা, পক্ষান্তরে একটি প্লাস্টিক বস্তার দাম পড়ে ১৭-১৮ টাকা। তাই ব্যবসায়ীরাও পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন আটা-ময়দার ব্যবসায়ী জানান, পাটের তৈরি বস্তায় আটা-ময়দা পরিবহন করাটা একটু কঠিন। কারণ পাটের বস্তায় আঁশ ও ছিদ্র থাকে। দেখা যায় আটা ও ময়দার সাথে এসব আঁশ আবার মিশে যায়। অনেক সময় ধুলাবালি বস্তার ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে আটা-ময়দার গুণগত মান নষ্ট হয়। তবে পাটের বস্তা আটা-ময়দার জন্য উপযোগী করে তৈরি হলে এটি ব্যবহারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই আটা ময়দার ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকারকে এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে এক সময় পাটের বস্তায় সব ধরণের পণ্য মজুদ ও পরিবহন হতো। কিন্তু খরচ বাঁচানোর জন্য অনেক মিল মালিক পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্য পরিবহন করছেন। তবে আমরা চাই সরকার যেন যেখানে পণ্য মোড়কীকরণ হয় সেখানে অভিযান চালায়।
চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্লাস্টিক বস্তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নাই। প্লাস্টিক বস্তায় পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করে সরকার বিভিন্ন সময় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তা ১০ শতাংশও কার্যকর হয়নি। এটি মূলত কিছু ব্যবসায়ীর ইচ্ছার অভাব এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতির কারণে এখনো বাজার প্লাস্টিক বস্তার দখলে।
চট্টগ্রাম রাইচ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উল্লাহ বলেন, পাট দপ্তর থেকে মাঝে মাঝে পরিদর্শক এসে দেখে যান বাজারে কি পরিমাণ পাটের বস্তা ও কি পরিমাণ প্লাস্টিক বস্তায় পণ্য পরিবহন হয়। তবে আমাদের কথা হলো-বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন মোকাম থেকে চাল আসছে প্লাস্টিক বস্তায়। ফলে পুরো বাজার প্লাস্টিক বস্তায় সয়লাব হয়ে গেছে। মোকাম থেকে পাটের বস্তায় চাল আসলে আমাদের বাজারে আর প্লাস্টিক বস্তা দেখা যাবে না এটাই বাস্তবতা। সরকারকে তাই উৎপাদন পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, পাটের বহুমুখী ব্যবহার, সমপ্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যবাধকতা করে সরকার। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে গত ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া ও তুষ-খুদ-কুঁড়ার মোড়ক হিসেবে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এদিকে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০-এর ধারা-১৪ অনুযায়ী পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ অপরাধ পুনঃসংগঠিত হলে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসপাতাল সিআরবি ছাড়া অন্যত্র হোক, এটাই দাবি
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশি ওমরাহ যাত্রীদের জন্য করোনাবিধি বদলালো সৌদি আরব