তিন-চার মাসের মধ্যে নির্বাচন চাইল বিএনপি

ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা

| মঙ্গলবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিএনপির পক্ষ থেকে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। ‘বড় ধরনের সংস্কার করে নির্বাচন’, আইএমএফের এক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এমন বার্তা দেওয়ার পর দিন গতকাল সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই মন্তব্য এল। বিকালে ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানানো হয়। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠন করা কমিশনে জমা দেওয়া প্রস্তাব তুলে ধরতে এই আয়োজনে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ। খবর বিডিনিউজের।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি, সেসব প্রস্তাব অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয় নাই যেটা নতুন করে কোনো কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচন সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া ইত্যাদি, আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার, এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের আরও সংস্কারপ্রশাসনিক সংস্কার, জুডিশিয়াল সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে, এগুলো সব সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে ৩/৪ মাসের বেশি সময় লাগবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়। প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নতুন ভোটার সংযোজন, কী কী ভুলভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার ‘স্ক্রুটিনি’ করা তারপরে নির্বাচনের কাজ; অফিসার নিয়োগ, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি সব কাজ গুছাতে প্রাকটিক্যালি ২/৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।’

বিএনপির নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক মঈন খান দলের এই অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘যদি সত্যিকার অর্থে সৎভাবে সঠিক ভোটার তালিকা আমরা করতে চাই, তাহলে কিন্তু বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, কম্পিউটার এআইআজকে কিন্তু আমরা কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে, সেটা অবশ্যই সঠিক হবে। আমি কোন দিন ১৮ বছর হয়ে যাব, সেটাও কিন্তু কম্পিউটার করে দিতে পারে। সেটার জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত ‘সময় সাপেক্ষ’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভোটার তালিকা প্রণয়নে ‘বাড়ি বাড়ি যাওয়া’, আমরা এটা বুঝি নাই কী হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে, তালিকা ঘোষণার সময়ে এটাও ঘোষণা করা হয় যে, কারো নাম যুক্ত না হলে তাহলে তারা স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন; বিভিন্ন কারণে ভোটার হওয়া যায় নি, এ রকম কেউ থাকলে কার্যালয়ে গিয়ে জানালেই তো ভোটার তালিকা হয়ে গেল, কারও নামে যদি অভিযোগ থাকে যে বেঁচে নাই, সেটা বাদ পড়ে যাবে। এরপর নির্বাচনি প্রস্তুতি, শিডিউল ঘোষণা করা, রুল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। এসব কিছু করতে এত বেশি সময় লাগার কথা না।’

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বিএনপির কী প্রস্তাব : সংবাদ সম্মেলনে মঈন খান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনআরপিও সংশোধনে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া সম্পূরক আদেশ বাতিল, নির্বাচন পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা হালনাগাদ করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের নির্বাচনি আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপি সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে কমিশনের কাছে দিয়েছে।

মঈন খান বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি জন্য যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ‘ডামি প্রতিনিধি’ না, ‘ভুয়া প্রতিনিধি’ না, সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।’

এক প্রশ্নে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেয়ার টেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে। এটাই ছিল ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার সবচাইতে বড় বাধা একটা। ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা, এসব হচ্ছে উপসর্গ। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এই সমস্ত উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ার টেকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমান্ত এলাকায় জান্তার সর্বশেষ ঘাঁটি মংডু আরাকান আর্মির দখলে
পরবর্তী নিবন্ধত্রিপল দিয়ে ঢেকে কাটা হলো কিছু অংশ