তিন ঘণ্টা হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে জন্মনিবন্ধনের আইডি

চসিকের উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড ৮৪টি সনদ ইস্যু থানায় ডায়েরি, কাউন্টার টেরোরিজমে অভিযোগ সনদগুলো বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আবারও হ্যাক হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর আইডি। এবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারীর আইডি ব্যবহার করে হ্যাকাররা ইস্যু করেছে ৮৪টি জন্মনিবন্ধন সনদ। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে হ্যাকাররা জন্মনিবন্ধন সনদগুলো ইস্যু করে।

বিষয়টি বুঝতে পারার পর দ্রুত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে আইডি দুটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ওয়ার্ড কার্যালয়ের আইটি বিশেষজ্ঞরা। পরে এ ঘটনায় জন্মনিবন্ধন সহকারী বিপ্লব কুমার দেব বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার বরাবরও অভিযোগ দেয়। অবহিত করা হয় সিটি মেয়রকেও। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, ইস্যুকৃত জন্মনিবন্ধন সনদগুলো বাতিলের বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

জিডিতে জন্মনিবন্ধন সহকারী বিপ্লব কুমার দেব উল্লেখ করেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রতিদিনের মতো অনলাইনে নতুন জন্মনিবন্ধন সনদের কাজ শুরু করেন। ১৫টি নতুন জন্মনিবন্ধন সনদ সম্পন্ন করার পর ব্যালেন্স চেক করতে গিয়ে অস্বাভাবিক অপরিশোধিত লেনদেন ও নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে দেখতে পান।

জিডিতে বলা হয়, ‘আমার অগোচরে আমার আইডি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের আইডি থেকে কে বা কারা ৮৪টি জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন করেছে।’ হ্যাকের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটে বলে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগে করা অভিযোগে দাবি করেন বিপ্লব। এ বিষয়ে জানার জন্য বিপ্লবের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বারেকের ব্যক্তিগত সচিব মো. সাইফুদ্দীন আজাদীকে বলেন, জন্মনিবন্ধন সহকারী ১৫টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করে প্রিন্ট নেন। এ সময় দেখেন অনেকগুলো জন্মনিবন্ধন সনদের অপরিশোধিত অর্থ জমা হয়ে গেছে। এতে অবাক হয়ে ম্যাসেজ চেক করতে গিয়ে দেখেন, একই সময়ের মধ্যে মোট ৯৯টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু হয়েছে। তার মানে সহকারীর ইস্যুকৃত ১৫টির বাইরে আরো ৮৪টি ইস্যু হয়েছে। সাথে সাথে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে আইডির নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেও উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে পাঁচটি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছিল। একই দিন ৬ নং চকবাজার এবং ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের নামেও জন্মনিবন্ধন ইস্যু করে হ্যাকাররা। সব মিলিয়ে ওইদিন মোট ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ (১২টি রোহিঙ্গার) ইস্যু করে। এ ঘটনায় একই বছরের ৯ জুন পতেঙ্গা ও চকবাজার থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট জন্মনিবন্ধন সহকারীরা। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার এক বছর নয় মাস পর গত ১০ নভেম্বর যশোরের শার্শা উপজেলা থেকে আশরাফুল আলম নামে একজনকে আটক করে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ। সে পেশায় দোকানি হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে সারা দেশে যেকোনো ঠিকানায় অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংযুক্ত ও সংশোধন করে আসছিল। জানা গেছে, ২০২১ সালে দেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অফিসিয়াল সার্ভারের আপগ্রেডেশনের কাজ চলার সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি ঘটে।

উত্তর পতেঙ্গাসহ তিনটি ওয়ার্ডের নামে জাল জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিএমপি কাউন্টার টেরোরিজমের উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার সরকার আজাদীকে বলেন, ১৮ জন্মনিবন্ধন ইস্যুর ঘটনায় একজন আসামিকে আটক করেছি। তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ অনেক আছে। কয়েকদিন আগে খুলশীতেও একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ছবিসহ আরো কিছু নথির দরকার হয়। অনলাইনে ডাটা ইনপুট দেওয়ার পর তা প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মুদ্রিত কপি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কার্যালয়ে জমা দেওয়ার পর সেগুলো যাচাই করা হয়। পরে একটি ক্রমিক নম্বরসহ ওয়েবসাইট থেকে জারি করা হয় জন্মসনদ এবং তা প্রিন্ট করে সনদ আকারে আবেদনকারীকে সরবরাহ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে জন্মনিবন্ধন আইন করা হয়। কার্যকর হয় ২০০৬ সালে। পাসপোর্ট ইস্যু, বিবাহ নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া, জমি রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। শুরুতে হাতে লেখা সনদ দেওয়া হতো। ২০১০ সালের শেষ দিকে এসে তা ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসারাহর চোখে পৃথিবী দেখছেন তারা দুজন
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশের হাতে র‌্যাব সদস্য গ্রেপ্তার