সীতাকুণ্ডে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে তিন গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার সকালে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ রিমা রানি দাস বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এতে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া এলাকার আমিন সওদাগরের পুত্র তৌহিদুল ইসলাম (৩২), আলমগীর হোসেন (৩৫) ও মৃত ফয়েজ আহাম্মদের পুত্র আমিনুল হক প্রকাশ আমিন সত্তদাগর (৫৫)। মামলার পর অভিযান চালিয়ে গতকাল সকালে আসামি আমিন সওদাগরকে নিজ ঘর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়ার অমৃত লাল দাশের বাড়িতে আমিন সওদাগর ও তার দুই ছেলে জোরপূর্বক জাম পাড়তে থাকেন। এ সময় দাশ বাড়ির পুরুষদের অনুপস্থিতিতে তিন গৃহবধূ তাদেরকে বাধা দেন। এতে ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে নারীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তিন গৃহবধূকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে, বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন করেন।
হামলায় যোগেন্দ্র দাশের স্ত্রী শ্রীমতি রানী দাস (৩০), মিলন চন্দ্র দাশের স্ত্রী অঞ্জনা রানী দাস (৩২) ও কৃষ্ণ চন্দ্র দাশের স্ত্রী রীমা রানী দাস (২৭) গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা চলে গেলে স্থানীয়রা আহত তিন গৃহবধূকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মামলার বাদী হামলায় আহত রিমা রানী দাস জানান, হামলাকারী আমিন সওদাগর ও তার ছেলেরা আমাদের পরিবারের বেশ কিছু জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দখল করতে চাইছে। এ নিয়ে একাধিকবার তারা আমাদের পরিবারের ওপর হামলা করে। ইতিপূর্বে এসব ঘটনায় দুইবার থানায় মামলা দায়ের করলেও আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের পার্শ্ববর্তী পুকুরপাড়ে থাকা জামগাছ থেকে জোরপূর্বক জাম পাড়তে শুরু করে। আমরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, আমিন সওদাগরের ছেলেরা জোর দেখিয়ে ওই পরিবারের জায়গা দখল করতে চায়। ওরা আগেও এই পরিবারের ওপর অনেক অত্যাচার করেছে।
বাঁশবাড়িয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, হামলায় জড়িতরা উগ্র স্বভাবের। তারা গ্রামীণ বিচার মানে না। তাই আমি ভুক্তভোগীদের আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, শনিবার সকালে আহত গৃহবধূ রিমা রানী দাস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনায় জড়িত আসামি আমিনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুই আসামিকে গ্রেপ্তারপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সীতাকুণ্ডের নেতৃবৃন্দ অমৃত লাল দাসের বাড়িতে নারীর ওপর নির্যাতন ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব কুমার দে, দীপক গুহ, চন্দন শীল, কৃষান্দু ভৌমিক, ডা. সুভাষ রায়, ভাগ্যধন সাহা, চন্দন দাশ প্রমুখ।












