রোহিঙ্গা নাগরিকদের কারণে নতুন ভোটার হতে এতদিন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের। এবার সেই ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের (এই পাঁচ জেলার) বাসিন্দাদের। তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চারটি কাগজ হলেই এখন থেকে এই বিশেষ অঞ্চলের নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন কমিশনের ‘শিথিল বার্তা’ জানাতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ আলী। সভায় তিনি জানান, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ও ভিনদেশি কোনো নাগরিক যেন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে। এছাড়া প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তিসহ অন্যান্য সময় ভোটার তালিকা বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ সহজ করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি জেলা অর্থাৎ চট্টগ্রাম, কঙবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সকল এলাকাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এসব বিশেষ এলাকার নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধনের জন্য তিনটি (এ বি সি) ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরির মধ্যে যারা পড়বে তাদের চারটি ডকুমেন্টস অবশ্যই লাগবে। এছাড়া যারা ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন তাদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। পাশাপাশি প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি সহজ করতে এ সিদ্ধান্ত সহায়ক হবে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫টি জেলা চট্টগ্রাম, কঙবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এলাকাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকার নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধনের জন্য তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ভোটার হতে এসএসসি/সমমান বা তদুর্ধ্ব অনলাইন সনদ, ভেরিফাইয়েবল কিইআর কোডযুক্ত অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, ভেরিফাইয়েবল কিইআর কোডযুক্ত অনলাইন নাগরিকত্ব সনদ এবং বাবা–মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হবে। তবে সরকারি চাকরিজীবীর সন্তান হলে সরকারি চাকরির প্রমাণস্বরূপ অফিস প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত সার্ভিস বইয়ের কপি, নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র প্রদান করতে হবে। যদি এসএসসি/সমমান বা তদুর্ধ্ব সনদ না থাকে তাহলে তাদের ‘বি’ ক্যাটাগরি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এক্ষেত্রে ভোটার হতে ভেরিফাইয়েবল কিইআর কোডযুক্ত অনলাইন জন্মনিবন্ধন ও অনলাইন নাগরিকত্ব সনদ ছাড়াও বাবা–মায়ের এএফআইএস (অটোমেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) যাচাই, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ (জেলা প্রশাসন অথবা পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে রাজা কর্তৃক প্রদত্ত) অথবা ভূমিহীন সনদ, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের রশিদ বা পর্চা, পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে তার কপিও সংযুক্ত করতে হবে। যদি বাবা–মায়ের মধ্যে একজন বেঁচে থাকে এবং তিনি ভোটার হয়ে থাকলে তার এএফআইএস যাচাই এবং অন্যজনের অনলাইন মৃত্যুসনদ দাখিল করতে হবে। আর বাবা–মা কেউ বেঁচে না থাকলে উভয়ের অনলাইন মৃত্যুসনদ দাখিল করতে হবে।
অন্যদিকে বিশেষ এলাকার যে সকল বাসিন্দা ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি ‘এ’ এবং ক্যাটাগরি ‘বি’ এর আওতায় পড়বে না তাদের ‘সি’ ক্যাটাগরি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। সেক্ষেত্রে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।
সভায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ আলী ও জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক।