তিন কিমি রাস্তায় যত টেনশন

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ নিয়ে বিড়ম্বনা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ জুন, ২০২১ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা নগর ট্রাফিক পুলিশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থায় নগরীর যান চলাচলে মারাত্মক সংকট তৈরি করেছে। দিনভর লেগে থাকে যানজট। যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে নগরীর বহুল প্রত্যাশার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ নাগরিক বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। অবশ্য সিডিএ বৃষ্টি ও নালা না থাকাকে এ বেহাল পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে। তাই সড়কটি চলাচল উপযোগী করতে আজ থেকে কাজ শুরু করছে বলে জানিয়েছে সিডিএ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটিকে পাঁচটি পৃথক ধাপে ভাগ করে কাজ করা হচ্ছে। এরমধ্যে লালখান বাজার-বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম ধাপ, বারেক বিল্ডিং-সল্টগোলা ক্রসিং দ্বিতীয় ধাপ, সল্টগোলা ক্রসিং-সিমেন্ট ক্রসিং তৃতীয় ধাপ, সিমেন্ট ক্রসিং-কাঠগড় চতুর্থ ধাপ এবং কাঠগড় থেকে পতেঙ্গার ল্যান্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত পঞ্চম ধাপ চিহ্নিত করা হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল শেষ ধাপ থেকে। প্রকল্পটির পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলাকার কাজ বেশ অগ্রসর হলেও সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় কাজই শুরু হয়নি।
সূত্র বলেছে, ট্রাফিক বিভাগের আপত্তি ও কাজের ধরণ নিয়ে কিছুটা সমস্যা থাকায় বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত অংশের কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত ফ্লাইওভারের কাজ শুরু করা হয়। এ কাজ শুরুর সময় ট্রাফিক বিভাগ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে প্রধান শর্তই হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য সড়কের মাঝখানে যেই অংশটি ঘিরে ফেলা হবে, তার উভয় পাশে দুই লেন করে চার লেনের সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। সিডিএ রাস্তার যেই অংশটি টিন দিয়ে ঘেরাও করছে, তার উভয় পাশে চার লেনের সড়কের বিষয়টি নিশ্চিত করতে নালা সরানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভবনের সামনের অংশ ভেঙ্গে রাস্তা তৈরি করেছে। এতে টিনের ঘেরার ভেতরে ফ্লাইওভারের পাইলিংসহ আনুষাঙ্গিক কাজ চললেও ঘেরার বাইরে দুই পাশে চার লেনের সড়ক তৈরি করা হয়। এতে সুষ্ঠুভাবে গাড়ি চলাচল করলে আগ্রাবাদ অফিসপাড়া কিংবা সন্নিহিত বন্দর কেন্দ্রিক যানজট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ সড়কে চার লেনে গাড়ি চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। রাস্তার বেহাল দশায় যান চলাচল অসম্ভব হয়ে উঠেছে, রাস্তাজুড়ে রয়েছে বড় বড় খানাখন্দক। কোথাও রাস্তার মাঝে রয়েছে বৈদ্যুতিক পিলার। আবার নালা তৈরির কাজের নানা সরঞ্জাম রাস্তায় রাখায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সড়কের খানাখন্দকের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। আগ্রাবাদের মতো জায়গায় রাস্তা নাকি ধানি জমি তা চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে। বড় বড় গর্তে থৈ থৈ করছে পানি। গতকাল সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- থেমে থেমে চলছে এক একটি গাড়ি। কোথাও গর্তে আটকা পড়ছে গাড়ি, পেছনে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
নগর পুলিশ দেওয়ানহাট থেকে যাওয়া ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর অধিকাংশকেই চৌমুহনী হয়ে বেপারিপাড়া রোড ধরে চলতে উৎসাহিত করছে। বিপুল সংখ্যক লোকবল নিয়োগ করেও পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স কর্পোরেশন সড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে দায়বদ্ধ হলেও তাদের দায়সারা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ম্যাক্স কর্পোরেশন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করলেও সড়ক জুড়ে যানজট নিয়ে তাদের তেমন মাথা ব্যথা নেই।
অবশ্য ম্যাক্সের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়টি আসলে তেমন নয়। আমরা সড়কে কাজ করার সুযোগই পাচ্ছি না। বৃষ্টি ও নালার পানি ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সড়কের কাজ করে দেয়া হবে।
নগর ট্রাফিক পুলিশের উপ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক আহমেদ দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ধার করে এনে পুলিশ ইট দিয়েছে রাস্তায়। লোকবল দ্বিগুণ তিনগুণ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছি না। আমরা ম্যাক্স কর্পোরেশনের সাথেও যোগাযোগ করছি। সিডিএ’র সাথেও কথা বলেছি। উন্নয়ন কাজ যেমন জরুরি, তেমনি সড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখাও জরুরি। তিনি বলেন, সড়কের এই অংশে যানজট সামলাতে আমাদের মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে। গত বেশ কয়েকদিন যাবত পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মাত্র তিন কিলোমিটার সড়কের যানজট বন্দরকেন্দ্রিক যানজটে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তিনি বলেন, ব্যস্ততম আগ্রাবাদসহ সন্নিহিত এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা পুলিশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, নানা চেষ্টা করেও সড়কটি ঠিক রাখতে পারছি না। আগ্রাবাদ এলাকায় কোন নালা নেই। নালার পানি উল্টো রাস্তায় উঠে। এতে বৃষ্টির পানি সরার পথ পাচ্ছে না। উপরন্তু নালার পানি রাস্তায় থৈ থৈ করে। ট্রাকে ট্রাকে ইট বালি দিয়েও রাস্তা ঠিকঠাক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স কর্পোরেশনকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। বৃষ্টি একটু থামলেই সড়কে কাজ করা হবে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চার লেনই ঠিকঠাক করে দেয়া হবে বলেও ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার দ্বিতীয় ডোজের জন্য সংরক্ষিত রেখেই টিকাদান
পরবর্তী নিবন্ধচাকরি হারালেন ত্ব-হাকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধু