তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল

কুকুর লেলিয়ে হিমুকে হত্যা

| শুক্রবার , ৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় এক দশক আগে চট্টগ্রামে কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে শিক্ষার্থী হিমাদ্রী মজুমদার হিমুকে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির মধ্যে তিন জনের সর্বোচ্চ সাজা বহাল রেখে দুজনকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট। ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চে গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা তিন আসামি হলেন- জাহিদুর রহমান শাওন, জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ ও মাহবুব আলী ড্যানি। তাদের মধ্যে শাওন জামিন নিয়ে এবং রিয়াদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক। জজ আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া শাহ সেলিম টিপু ও শাহাদাত হোসেন সাজুকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. হারুন অর রশীদ, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমদ হিরু, মিজানুর রহমান খান, মো. আলতাফ হোসেন আমানী ও হুমায়ূন কবির। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ, মোহাম্মদ ইয়াছির সিকদার, মো. কামাল পারভেজ।
রায়ের পর সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমদ হিরু বলেন, আসামিরা পৃথিবীর দ্বিতীয় হিংস্র কুকুর, রোটেলার নামে পরিচিত, সেই কুকুর লেলিয়ে হিমাদ্রীকে নির্যাতন করে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করে, যেটি রায়ে উঠে এসেছে। রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, শিকড় নামে একটি মাদকবেরোধী সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল হিমাদ্রী। এরকম একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে হিমাদ্রী কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন। সে একজন কোমলমতি শিক্ষার্থী ছিল। তার এই সামাজিক কল্যাণমূলক কাজকে ভালোভাবে নেয়নি প্রভাবশালী মহল। যে কারণে হিমাদ্রীসহ সংগঠনের অপরাপর অনেকেই হুমকি পেয়েছে। হুমকি পাওয়া অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তারপরও প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের থাবা থেকে রেহায় পায়নি হিমাদ্রী। খবর বিডিনিউজের।
বিচারিক আদালতে দণ্ডিত সাজু ও টিপুর খালাসের বিষয়ে রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা বলেন, অপরাধ সংঘটনের সময় তাদের উপস্থিতি সাক্ষ্য-প্রমাণে আসেনি, যে কারণে তাদের খালাস দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ দুজনের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে করবে বলে জানান এ আইন কর্মকর্তা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল বন্দরনগরীর পাঁচলাইশ এলাকার সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে হিমুকে ধরে নিয়ে যায় আসামি শাওন, রিয়াদসহ কয়েকজন। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য ‘এ’ লেভেল পাস করা হিমুর বয়স তখন ১৮ বছর। আসামিরা তাকে ধরে পাঁচলাইশ এলাকায় রিয়াদের বাবা ব্যবসায়ী টিপুর বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে মারধরের পর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয় ছাদ থেকে।
হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছরের ২৩ মে মৃত্যু হয় হিমুর। ওই ঘটনায় হিমুর মামা শ্রী প্রকাশ দাশ বাদী হয়ে শাওন, রিয়াদ, সাজু, ড্যানি ও রিয়াদের বাবা ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপুকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট চাঞ্চল্যকর এ মামলার পাঁচ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম। পরে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের নিয়ম অনুযায়ী ওই বছরই মামলার সব নথিপত্র আসে হাই কোর্টে। এদিকে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন আসামিরা। দীর্ঘদিন পর এ মামলার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিল হাই কোর্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরায়ে স্তম্ভিত হিমুর মা-বাবা
পরবর্তী নিবন্ধসংবিধান দিবস আজ