তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড

আমরা রায়ে সন্তুষ্ট, দ্রুত কার্যকর হোক : আরাফের বাবা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৯ মে, ২০২২ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বাকলিয়ায় পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছরের শিশু আবদুর রহমান আরাফ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। তারা হলেন হত্যার পরিকল্পনাকারী মো. ফরিদ, হত্যায় সরাসরি যুক্ত নাজমা বেগম ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতাকারী তার ছেলে মো. হাসান। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে তিনজনকেই এজলাস কক্ষে হাজির করা হয়। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ, আসামি পক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা এজলাস কক্ষে এসে পৌঁছালে বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। এসময় এজলাস কক্ষে হাজির ছিলেন শিশু আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম, মা ফারহানা ইসলামসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। ছেলে হত্যার বিচার স্বচক্ষে দেখতে তারা সকাল সকাল আদালত পাড়ায় এসে হাজির হন।

রায় পরবর্তী রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, সন্দেহাতীতভাবে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন আসামিকেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এদের মধ্যে মো. ফরিদ হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে না থাকলেও তার দায়ভার কোনোভাবেই কম ছিল না। তিনি ছিলেন ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও হত্যার নির্দেশদাতা। আদালতের কাছে এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছে। পিপি বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যে এ মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার, তদন্ত কার্যক্রম, বিচার প্রক্রিয়া সবমিলে সময় লেগেছে মাত্র ১ বছর ১০ মাস ১০ দিন। সমাজে এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শিশু আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। এখন আমাদের একটাই প্রত্যাশারায় দ্রুত কার্যকর হোক।

২০২০ সালের ৭ জুন বাকলিয়ার মিয়াখান নগর এলাকার নুরুল আলম মিয়া নামের এক আওয়ামী লীগ নেতার ৮ তলা ভবনের ছাদের পানির ট্যাংক থেকে শিশু আরাফের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ভবনের একটি কক্ষে ভাড়ায় থাকতেন শিশু আরাফসহ তার বাবা ও মা। এ ঘটনায় আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র ধরে গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে। আদালতে উপস্থাপন করলে তিনজনই ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পূর্ব শত্রুতার জেরে বাড়ির মালিক ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলম মিয়াকে ফাঁসাতেই শিশু আরাফকে হত্যা করা হয়েছে, তদন্ত পরবর্তী আদালতে দেয়া চার্জশিটে এমনটাই উঠে আসে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন মো. ফরিদ। এ ফরিদের সঙ্গেই পূর্ব বিরোধ ছিল আব্দুল কাইয়ুমের। এ জন্য আর্থিক টানাপোড়েনে থাকা ভবনের অপর ভাড়াটিয়া নাজমা বেগমকে ২০ হাজার টাকায় হাত করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার দিন নাজমা বেগম তার ছেলে ও ভবনের দারোয়ান মো. হাসানের সহযোগিতায় শিশু আরাফকে ছাদে নিয়ে হত্যাকাণ্ড সম্পাদন করা হয়।

আদালতসূত্র জানায়, শিশু আরাফ হত্যা মামলায় গত বছরের ১০ মার্চ তিন আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। এরপর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জন ও আসামিপক্ষে ১০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরপর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ৩০ মার্চ এ মামলায় রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু সেদিন আদালতের ব্যস্ততার কারণে রায় ঘোষণা হয়নি। পরবর্তী তারিখ ছিল গত ২৮ এপ্রিল। সেদিনও রায় ঘোষণা হয়নি। এবার আসামি পক্ষের আবেদনে পিছিয়ে যায় রায় ঘোষণার দিন। এক পর্যায়ে রায় ঘোষণার জন্য ১৮ মে পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুনিরা কোনোভাবে দয়া-কৃপা পেতে পারে না : আদালত
পরবর্তী নিবন্ধপানির ট্যাংকে ফেলে সেদিন যেভাবে হত্যা করা হয় আরাফকে