ড. মাহবুবুল হক স্যারের মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভূত। স্যারকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা। যখন ‘অনন্য ধারা’ পত্রিকায় স্যারের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম সেই সময়ের কিছু অনুভূতির কথা মনে পড়ছে। যেদিন সাক্ষাৎকারের জন্য যাচ্ছি মনের ভেতর ভীষণ ভয় কাজ করছিল। এতো বড়োমাপের ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি আমি আগে কখনো এভাবে যাইনি। কিন্তু যখন বাসায় পৌঁছলাম স্যার অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমাকে বসতে বললেন। তিনি অসুস্থ। তাঁকে ডায়ালাইসিস করতে হয়। যাওয়ার আগের দিন যখন আমি ফোন দিলাম তার আন্তরিকভাবে আমাকে সময় দিতে রাজি হলেন। পরদিন নির্ধারিত সময়ে একদম ঘড়ির কাঁটা ধরে আমি স্যারের বাসায় উপস্থিত হলাম। কিছু সাধারণ কথার পর স্যারের কাছে যে জন্য যাওয়া সে বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলাম। স্যারের কথা শুনতে শুনতে আমি উপলব্ধি করলাম, পথের আলোয় তিনি চলেননি বরং পথকে তিনি আলোকিত করেছেন। আপন মনে চলেছেন নিজের পথে। অমসৃণ পথকে তিনি মসৃণ করে নিয়েছেন নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে। তাই খ্যাতির পেছনেও তাঁকে ছুটতে হয়নি। খ্যাতিই এসে তাঁর দু‘হাত ধরেছে। তিনি অত্যন্ত যত্ন করে তাঁর স্মৃতিতে তুলে রাখা জীবনের বিভিন্ন সময়ের পাতা খুলে দেখাচ্ছিলেন। আমার মনে হলো স্যার নিজেই এমন একটি গ্রন্থ যে গ্রন্থ লিখতে গেলে পাতার পর পাতা ভরে উঠবে। তবু লেখা শেষ হবে না। একটি জ্ঞান প্রদীপের সান্নিধ্যে আমি গিয়েছিলাম সেটি আমার জীবনের একটি বড় সৌভাগ্য। স্যার অত্যন্ত সময় সচেতন, একনিষ্ঠ এবং অত্যন্ত দায়িত্ব পরায়ণ। তিনি স্মরণ করছিলেন তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত স্কুল ম্যাগাজিন ‘কিশোর’, পদাতিক, কলরোল, পত্রিকার কথা। যখন রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে সরকার খুব বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল রেডিও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথের গান বন্ধ করে দেওয়া হয় তার প্রতিবাদে তিনি বের করেছিলেন দুটো পকেট বইয়ের মত পুস্তিকা। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ বার্ষিকীর ‘অন্বেষা‘ ম্যাগাজিনের সম্পাদনাও করেছিলেন। অনন্য ধারা‘ পত্রিকার সেই সংখ্যায় স্যারকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়। পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার পর সংখ্যাটি নিয়ে যেদিন স্যারের কাছে গেলাম সেদিনের কিছু কথা কখনো ভোলার নয়। তিনি কথা বলতে বলতে পত্রিকার পাতাগুলোই চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলেন। একেবারে শেষ পাতায় কভারের সঙ্গে লাগানো আমার বইয়ের প্রচ্ছদগুলো দেখে পাঁচটি শিশুতোষ গল্পের বই দেখিয়ে বললেন, এই বইগুলো আমি কিনবো। আমার নাতনিকে আপনার গল্পগুলো পড়ে শোনাবো। স্যার সত্যিই আমার বই সংগ্রহ করেছিলেন শেখ রাসেল বইমেলা থেকে। এটি আমার জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। স্যারের সেই স্নেহময় সহযোগিতার কথা আজীবন আমার স্মরণে থাকবে শ্রদ্ধার সাথে।