তিনি ‘জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট’ তার অনেক গুণ

নারীর সাথে প্রতারণা করে গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

সুমনা রায় (ছদ্মনাম) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী। আসামি অভিজিৎ ঘোষের (২২) সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে মেসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বের সুবাধে অভিজিৎ প্রেমের প্রস্তাব দেন সুমনাকে। এ সময় অভিজিৎ ঘোষ নিজেকে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছেন এবং বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ ক্যাডারে চান্স পেয়েছেন বলে জানান। এছাড়া তাকে বাংলাদেশের নামীদামি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইন বিষয়ক প্রভাষক পদে যোগদান করার জন্য ই-মেইলে বার্তা পাঠাচ্ছে বলে জানান।
সর্বশেষ তিনি জানান, ১২তম ব্যাচে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। অভিজিতের বন্ধু ২ নং আসামি সত্যজিৎ দাশ শুভও (২৮) জানান, অভিজিৎ ঘোষ একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। অভিজিৎ আরো জানান, তার পিতা প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব এবং মাতা একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার। তারা ঢাকায় অবস্থান করায় অভিজিৎ ঢাকায় থাকেন। মাঝে মাঝে কোতোয়ালী থানাধীন ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় তার মাসির বাসায়ও থাকেন।
এরই মধ্যে প্রতারক অভিজিৎ ঘোষ তার সহযোগী সত্যজিৎ দাশের সহায়তায় সুমনাকে প্রভাবিত করে তার মাসির ফিরিঙ্গিবাজার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে বিয়ের প্রলোভনে অভিজিৎ তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এক পর্যায়ে অভিজিৎ ঘোষ ৫০ টাকা মূল্যমানের দুটি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে জাল স্বাক্ষর করে ও ভুয়া বিবাহের হলফনামা তৈরি করে সুমনাকে একটি ফটোকপি দেন এবং তাকে বিবাহ করবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে অভিজিৎ তার সহযোগী সত্যজিৎ শুভর মাধ্যমে সুমনাকে তার মাসির বাসায় নিয়ে যেতেন এবং ধর্ষণ করতেন। সর্বশেষ গত ২১ মার্চ দুপুর ১২টায় অভিজিৎ সুমনাকে তার মাসির বাসায় নিয়ে যান এবং একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
বিষয়টি সুমনা তার পিতা-মাতার নিকট জানালে সুমনার পিতা অভিজিৎকে ফোন করে বাসায় যেতে বলেন। অভিজিৎ তার সহযোগী সত্যজিতকে নিয়ে বাসায় যান। এ সময় অভিজিৎ সুমনার পিতা-মাতার কাছে নিজেকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেন। তার সহযোগী সত্যজিৎ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় তা নিয়ে হুমকি-ধমকি এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মামলা-মোকদ্দমা করে হয়রানি করার কথাও জানান।
গতকাল শনিবার ভিকটিম সুমনা রায় কোতোয়ালী থানায় আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু আইনের ৯(১) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া সিএমপি কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা ও কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিনের কাছে জবানবন্দি দেন।
এরপর মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মোমিনুল হাসান গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফিরিঙ্গিবাজার থেকে আসামি অভিজিৎ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারকৃত অভিজিৎ ঘোষ বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডী গ্রামের আশীষ কুমার ঘোষের ছেলে।
আটকের পর আসামি অভিজিতকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে সুমনাকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করে। অপরদিকে ২ নং আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, সে একজন বড় প্রতারক। নিজেকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করে আসছে। আমরা তাকে আটক করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা হচ্ছে না এবারও
পরবর্তী নিবন্ধহেফাজত উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী, তাদের নিষিদ্ধ করুন