বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর থেকে ব্যস্ততার শেষ নেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। প্রথম দিন বোর্ড পরিচালকদের নিয়ে দীর্ঘ সভা করেন তিনি। পরদিন গতকাল যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার আমন্ত্রণে তিনি যান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে। বিকেলে বিসিবিতে বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে আরেক দফায় বৈঠকে বসেন আমিনুল। এর ফাঁকে অল্প কিছুক্ষণের জন্য তিনি ঘুরে যান বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) থেকে। সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাবেক এই অধিনায়ক শোনালেন বিসিবির দায়িত্বে তার ‘তিনটি শতভাগ লক্ষ্য পুরণের স্বপ্নের কথা। গত শুক্রবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনেই আমিনুল বলেছিলেন সারা দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যের কথা। সেদিন তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে নয়, বরং ‘ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ’ নিয়ে কাজ করবেন। এটি নিয়ে তখন শুধু প্রাথমিক একটা ধারণা দেন তিনি।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাতে এই বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেন আমিনুল। পরে বিএসজেএতে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের পর ‘ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ’ প্রক্রিয়াটা কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা ব্যাখ্যা করেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন এখানে আমরা তিনটি কাজ করতে চাই। যেটাকে আমি বলছি আমরা ট্রিপল সেঞ্চুরি করব। শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম ও শতভাগ রিচ। বাংলাদেশের শতভাগ জায়গায় আমরা পৌঁছাব। আমাদের আস্থা থাকবে। আমাদের প্রোগ্রাম থাকবে। এই ট্রিপল সেঞ্চুরি করার জন্য ক্রিকেট বোর্ড তিনটি প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। আমরা স্পিরিট অব ক্রিকেট আপগ্রেড করব। দ্বিতীয়ত, সবার জন্য হাই পারফরম্যান্স। শুধু ক্রিকেটার নয়, যারা বোর্ডের কর্মকর্তা আছে, তাদের কাজও যেন হাই পারফর্মিং হয়। তিন নম্বর হচ্ছে, ক্রিকেটটা সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেব। দেশের ক্রিকেটে ঢাকা–নির্ভরতা কমাতে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার দাবি ও আলোচনা বেশ পুরোনো। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে নানা সময়ে দাবি তোলা হয় সারা দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার।
কয়েক বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে শুরু করা হয় আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কার্যক্রম। নানান জটিলতায় এটি আর বেশি দূর এগোয়নি। বাংলাদেশের বাস্তবতা ভালোভাবেই জানা আমিনুলের। ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখে পড়তে পারেন, সেটিও আঁচ করতে পারছেন তিনি। তাই নতুন পরিকল্পনার পথ ধরে ক্রিকেটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান সাবেক অধিনায়ক। ক্রিকেট বোর্ড শুধু মিরপুরে বসে থাকবে না। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার সময় আঞ্চলিক সংস্থার কাঠামো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত হয়নি। যেভাবেই হোক সেটা আমরা করব। আমলাতান্ত্রিক জাটিলতা নিরসন করব। এনএসসিও আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। এর আগে শুধুমাত্র ক্রিকেট নিয়ে দেশের সব জায়গায় আঞ্চলিক সংস্থার মতো করে ছড়িয়ে যাচ্ছি খুব শিগগির। আইসিসির কাছে এটা আমাদের একটা প্রতিশ্রুতি ছিল। এখন এটা এক নম্বর প্রায়োরিটি। অবশ্যই ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সও এর সঙ্গে আছে। দেশের ক্রিকেটের সব কিছু ঢাকা–কেন্দ্রিক হওয়ায় এখন জাতীয় ক্রিকেট লিগের যে কোনো বিভাগের দল গোছানোর পুরো প্রক্রিয়াটাই পরিচালনা করেন জাতীয় নির্বাচকরা। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে নতুন প্রক্রিয়া শুরু করতে চান আমিনুল।
শুধু তা–ই নয়, গ্রাম–উপজেলা থেকে শুরু ক্রমান্বয়ে জাতীয় দল পর্যন্ত উঠে আসার পথ তৈরি করার লক্ষ্যে আইসিসিতে ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করা সাবেক এই ক্রিকেটারের। খেলোয়াড় তৈরির এই পথ তৈরির কাজে সাফল্যের জন্য আঞ্চলিক সংস্থাগুলোকেও রাখা হবে পর্যবেক্ষণে। আমিনুল জানালেন, নিজ নিজ অঞ্চলের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বিসিবি থেকে অনুদান পাবে আঞ্চলিক সংস্থাগুলো। এটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নয়, ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ করব। আমরা অঞ্চলগুলোকে কিন্তু বোর্ড থেকে কোনো অনুদান দেব না। পারফরম্যান্স, ক্রিকেটারের সংখ্যা, নিজস্ব সুবিধাদি, কোচ, আম্পায়ারদের সংখ্যা মিলিয়ে তাদেরকে অর্জন করে নিতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে তারা যেভাবে কাজ করবে, সেভাবে তাদের ফান্ডিং দেওয়া হবে। এই ফান্ডিং মডেলটাও আমরা করে দিচ্ছি। এসময় বিসিবির পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন।