মিরপুর টেস্টে দুই দলের মোট ৩৩ উইকেট পড়েছে। এর মধ্যে ১৬টিই পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ও বাংলাদেশ দলের পেসাররা। প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট (৩+৬) দখল করে বাংলাদেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছেন। কাইল ভেরেইনের শতক আর অলরাউন্ডার উইয়ান মুলদারের হাফসেঞ্চুরি দক্ষিণ আফ্রিকার ভিত শক্ত করে দিয়েছিল। এরপর জয়ের পথে আসল পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন রাবাদা। ডানহাতি এই পেসারের বিধ্বংসী বোলিংয়ের কাছেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশের লড়াকু পুঁজি গড়ার পথ বন্ধ করেন রাবাদা। দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নাজমুল হোসেন শান্তর দলের ‘বারোটা’ বাজিয়েছেন তিনি। গত বুধবার প্রথম স্পেলে সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হককে ফিরিয়ে টপঅর্ডারে ভাঙন ধরান রাবাদা। মাঝে যে দুজন নতুন করে ইনিংস সাজানোর চেষ্টা করছিলেন, সেই মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিকুর ফিরিয়ে আবার বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন রাবাদা। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে প্রথমে নাইম হাসান, পরে মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের সব আশা ভঙ্গ করেন রাবাদা। তৃতীয় দিনের শেষ দিকে অষ্টম উইকেটে ৩৩ রানের জুটি করে আশা জাগান মিরাজ ও নাইম। অনেকেরই আশা ছিল, এই জুটি আরও ঘণ্টা খানেক খেললে বাংলাদেশ ১৬০–১৭০ রানের লিড নিতে পারবে। তখন হয়তো লড়াই জমে উঠবে। কিন্তু চতুর্থ দিন সকালে নতুন বল হাতে সংহারমূর্তি ধরে টাইগার সমর্থকদের আশা ভেঙে চুরমার করেন রাবাদা।
এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, দুই ব্যাটার ভেরেইনে ও মুলদারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শক্ত ভীত গড়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে পেসার রাবাদার দুর্দান্ত বোলিংয়েই। কিন্তু যে পিচে রাবাদা ম্যাচের ভাগ্য লিখে দিলেন, শেরে বাংলার সেই উইকেটে স্বাগতিক বাংলাদেশ মাঠে নামলো একমাত্র পেসার হাসান মাহমুদকে নিয়ে। শুরুর ওই ভুলেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তারপর ৮ ব্যাটার নিয়ে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অলআউট হওয়ায় ঘটেছে সর্বনাশ। সেখান থেকে আর উঠে আসা সম্ভব ছিল না। সম্ভব হয়নিও। প্রশ্ন উঠেছে কেন বাংলাদেশ ৮ ব্যাটার ও ৪ স্পিনারের সঙ্গে মাত্র একজন পেসার নিয়ে দল সাজিয়েছিল? তবে কি বাংলাদেশের ধারণা ছিল, শেরে বাংলার পিচ হবে ব্যাটারদের স্বর্গ? একটা সময় গিয়ে স্পিনারদের সাহায্য করবে, পেসারদের করার কিছুই থাকবে না। ম্যাচ শেষে মেহেদী হাসান মিরাজের কথা শুনে মনে হলো সেটাই। ডানহাতি অলরাউন্ডার স্বীকার করলেন, বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট উইকেট চিনতে ভুল করেছিল। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটা উঠলো এভাবে যে, বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী ছিল? এক পেসার নিয়ে খেলাটা টেকনিক্যাল ব্লান্ডার ছিল? উত্তরে মিরাজ বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তাদের ধারণা ছিল মিরপুরের উইকেট হবে টার্নিং। আমরা যেমন আশা করেছিলাম মিরপুরের উইকেটে টার্নিং হবে। আমরা স্পিনাররা ডমিনেট করবো। এখানে মিরপুরে স্পিনাররা ডমিনেট করে। কিন্তু কন্ডিশনটা অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল। ওরাও ভালো বল করেছে। আমাদের হাসান মাহমুদও ভালো বল করেছে। আমরা স্পিনাররা ভালো করলে, আমি আর নাইম ভালো বল করলে এই প্রশ্ন আসতো না। বিশেষ করে আমার কাছে দল চায় ৫–৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতাবো, সেটা করতে পারিনি। ওখান থেকে ব্যাকফুটে পড়ে গিয়েছি।