স্কুলে গরমের ছুটি। তাসমিয়া মামাবাড়ি বেড়াতে এসেছে। ক্লাস ফাইভে পড়ে সে। মামাদের ইয়া বড় আমবাগান। মামাতো ভাই মারুফের সাথে চারিপাশ ঘুরে ঘুরে দেখল। মনটা ভরে উঠলেও একটা জিনিসের প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ রয়েই গেলো। আকর্ষণটা হলো, মামাবাড়িতে সে ঝড়ের দিনে আম কুড়াবে। বেলা বিকেল। আস্তে আস্তে মেঘে মেঘে অন্ধকার হয়ে আসছে চারিদিক।
একটু আগে দুপুরের খাওয়া–দাওয়া শেষ করে বারান্দায় বসে আছে তাসমিয়া ও মারুফ। তাসমিয়া মনে মনে বলছে, ঝড় আসে না কেন!
শুরু হলো ঝড়। বাতাসে সারা আকাশ কালো হয়ে গেলো মুহূর্তে। বিজলি চমকাচ্ছ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ছে। বাতাসে দরদর করে আম পড়ছে। তাসমিয়ার মন আর মানছে না! চলে গেলো আম কুড়াতে। মারুফ তাকে কতবার বলল– এখন না, ঝড় থামলে যাস্; আমিও যাবো। তাসমিয়ার নানা–নানি, মামা–মামিও কত বারন করল– কোন কথাই সে শুনল না। মারুফও ঝড়ের ভেতর আম কুড়াতে যায়। কিন্তু এখনকার মত ভয়ানক ঝড়ে সে বাড়িতেই থাকে।
প্রচণ্ড আকারে ঝড় হচ্ছে!
কার যেন টিনের চালা উড়ে এসে পড়ল মারুফদের পুকুরে। বজ্রপাত ঘটল নারকেল গাছের মাথায়। ডালাপালা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ঘরের ভেতর সবাই চিন্তা করছে, তাসমিয়া এই প্রচণ্ড ঝড়ের ভেতর না জানি কি করছে। সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো, কাঁদছে!
অনেকক্ষণ পর ঝড় থামল।
সবাই বের হলো তাসমিয়ার খোঁজে।
দেখে আমবাগান তছনছ হয়ে গেছে। সবাই গাছের ডালপালা সরিয়ে সরিয়ে তাসমিয়াকে খুঁজতে লাগলো। অনেক খোঁজাখুঁজি হলো। কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তাসমিয়াকে। সবাই কান্নাকাটি করছে– তাসমিয়ার কই গেলো! তাসমিয়া কই গেলো!
কাঁন্নার শব্দ শুনে আমবাগানের পাশের একটা বাড়ি থেকে ছুটে আসল এক মুরুব্বি চাচি। বলল– কি হয়েছে তোমাদের? এত কান্নাকাটি করছ কেন?
সবাই জানাল, তাসমিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে ঝড়ের ভেতর আম কুড়াতে এসেছিল।
মিচকি একটা হাসি দিয়ে চাচি বলল, সে তো আমাদের বাড়িতে। ঝড়ের গতি ভয়ানক দেখে আমি তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাই।
সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। দৌঁড়ে চলে গেলো তাসমিয়ার কাছে।
আচ্ছামত বকা দিলো তাসমিয়াকে সবাই। তাসমিয়া বলল, আমি আর কখনো এরকম করব না।