আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে চলা লড়াই অসমাপ্ত রেখে বিদেশি বাহিনীগুলো চলে যাওয়ার পর কঠিন চাপে পড়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে গিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। মঙ্গলবার ভোর রাতে এ ধরনের এক পরিস্থিতিতে আফগান কমান্ডোদের সঙ্গে ছিলেন রয়টার্সের একজন সাংবাদিক, তার ভাষ্যে উঠে এসেছে ভয়াবহ পরিস্থিতির এক খণ্ড চিত্র। খবর বিডিনিউজের।
মঙ্গলবার ভোর রাতে ঘাঁটিতে ফেরার পরই ক্লান্ত একদল আফগান কমান্ডো জরুরি বার্তা পেয়ে দ্রুতগতিতে আবার বের হয়ে যান, কান্দাহারের শহরতলীতে তালেবান বিদ্রোহীদের ফাঁদে পড়া এক পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধারে রওনা হন তারা। রয়টার্সের ওই সাংবাদিক জানান, আগের অভিযানটি উত্তেজনাপূর্ণ হলেও সেখানে পরিস্থিতি শান্ত ছিল, কিন্তু এবারের পরিস্থিতি তেমন ছিল না।
পুলিশ কর্মকর্তা আহমদ শাহ ১৮ ঘণ্টা ধরে যে চেকপোস্টটিতে আটকা পড়ে আছেন স্পেশাল ফোর্সের ৩০ থেকে ৪০ জন কমান্ডোকে বহনকারী এক লাইনে থাকা হামভি গাড়ির বহরটি সেদিকে এগোতেই স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির মুখে পড়ে।
গাড়িবহরটি তা অগ্রাহ্য করে শাহের অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে দুপক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যেই তড়িঘড়ি করে শাহকে একটি হামভিতে তুলে নেওয়া হয়।
এরপর শুরু হয় মুহুর্মুহু ভারী বিস্ফোরণ। গাড়িবহরের আটটি হামভির মধ্যে প্রথম তিনটিতে রকেট আঘাত হানে আর সেগুলো অচল হয়ে যায়। বিভ্রান্তির মধ্যেই অচল হামভিগুলোর কমান্ডোরা ট্রাকে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় প্রায় চারদিক থেকে গুলি ছুটে আসতে থাকে, বাম দিকের একটি কবরস্থান থেকে আর ডান দিকে মোটা ইউক্যালিপটাস গাছগুলোর আড়াল থেকে। এক পশলা গুলি হামভির ধাতুর বর্মে প্রতিহত হয়ে অনুরণন তোলে। হামভিগুলোর ওপরে থাকা গানাররা প্রায় অদৃশ্য সন্দেহভাজন তালেবান যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বেপরোয়াভাবে গুলি ছুড়তে থাকেন। বাকি হামভিগুলোও বেশ কয়েকটি রকেট চালিত গ্রেনেডের আঘাত সহ্য করে। কমান্ডোতে ঠাসা গাড়িটির ভেতরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ প্রতিধ্বনিত হয় আর গাড়িগুলো ভীষণভাবে কেঁপে ওঠে।
বিদ্রোহীদের ‘হিট অ্যান্ড রান’ কৌশলের কারণে তাদের সঙ্গে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যেখানে বেসামরিকের সংখ্যা অল্প সেখানে যুদ্ধবিমানগুলো কভার দিতে পারলেও শহর এলাকায় এ ধরনের কিছু করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
শাহ জানিয়েছেন, ওই চেকপোস্টে তারা ১৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তার সঙ্গীরা তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও তিনি করেননি।