আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় পাকিস্তানে পালিয়ে গেছেন সংগীতশিল্পীরা। সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে পাকিস্তানে ঢুকেছেন এবং এখন আত্মগোপনে আছেন- এমন ছয় আফগান সংগীতশিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। পাকিস্তানে পালানো এই সংগীতশিল্পীদের একজন বলেছেন, আফগানিস্তানে থেকে গেলে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে বলে শঙ্কিত ছিলেন তিনি। তালেবান সংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এমনকী গত আগস্টে বাঘলান প্রদেশে এক লোকসঙ্গীত শিল্পীকে হত্যা করারও অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে এ বিষয়ে তালেবান এখনও কোনওকিছু বলেনি। খবর বিডিনিউজের। যাকে হত্যা করা হয়েছিল, তার নাম ফাওয়াদ আনদারাবি। তার ছেলে জাওয়াদ বার্তা সংস্থা এপি কে বলেছিলেন, আনদারাব উপত্যকায় তাদের কৃষি খামার আছে। সেখানে তার বাবাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে তালেবান। আফগানিস্তান থেকে যে ক’জন শিল্পী পাকিস্তানে পালিয়েছেন, তাদের একজনের নাম খান (ছদ্মনাম)। ২০ ধরে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মূলত বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গাইতেন তিনি। পশতুদের বিয়েতে লোকসংগীত শিল্পীরা বেশ জনপ্রিয়। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তালেবান সরকারের পতনের গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন খান। তার আগে এ সুযোগ ছিল না। কারণ, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শাসনামলে তালেবান সংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এবার আফগানিস্তান দখলে তালবানের অগ্রযাত্রার সময়ও গান নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন না খানসহ অন্য শিল্পীরা। তাদের ধারণা ছিল, হয়ত তালেবান বদলে গেছে। তারা হয়ত এবার গান করা কিংবা গান কম্পোজ করার সুযোগ দেবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা ছিল ভুল। গত মাসে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর অস্ত্রধারীরা খানের সব বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলে। তারা খানকে খুঁজেও বেড়াচ্ছিল। খানের ধারণা, ওই অস্ত্রধারীরা তালেবান যোদ্ধা। এর পরদিন ভোরেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাবুল ছেড়ে চলে যান খান। তালেবান সম্পর্কে যা ভেবেছিলেন তা ভুল ছিল, এখন সেকথাই বলছেন তিনি। এই গায়ক ও সংগীত পরিচালকরা তোরখাম ও চামান সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে গেছেন। ইসলামাবাদ ও পেশোয়ারের শহরতলিতে লুকিয়ে আছেন তারা। পাকিস্তানের বাইরে কোথাও রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার পথ খুঁজছেন তারা। এমনই আরেক শিল্পী হাসান (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, তালেবান তাকে ধরতে পারলে মেরে ফেলত। কারণ, কাবুলের পতনের আগে তিনি আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর জন্য গান গেয়েছিলেন।