তালিকার বাইরে থাকা প্রতীক কখনো কাউকে দেওয়া হয়নি : সিইসি

‘আমরা চাই স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে’

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন আমরা চাই একটি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে। লুকানো কোনো নির্বাচন দিতে চাই না। রাতের অন্ধকারের ভোট চাই না। আমরা চাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নসবার দৃষ্টিগোচর হয় এমন নির্বাচন।

গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত তালিকায় এনসিপির দাবি করা প্রতীকটি না থাকায়, এনসিপিকে শাপলা দেওয়া যায়নি। তিনি বলেন, নিয়ম হলোযখন কোনো দল নিবন্ধিত হয়, তখন তাকে কমিশনের নির্ধারিত প্রতীকের তালিকা থেকেই একটি প্রতীক নিতে হয়। এনসিপি যেটি চেয়েছিল, সেটা তালিকাভুক্ত ছিল না। তবে কমিশন চাইলে প্রতীক বাড়াতে ও কমাতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। সিইসি বলেন, এখন পর্যন্ত তালিকার বাইরে কাউকে প্রতীক দেওয়া হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগে ১১৫টি প্রতীক ছিল না, এখন আছে। নতুন করে প্রতীক যোগ করতে অসুবিধা আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কোনো অসুবিধা নেই বলে জানান তিনি। কমিশন এর আগেও জানিয়েছে, ভোটের মার্কা হিসেবে জাতীয় প্রতীক ‘শাপলাকে’ ব্যবহার না করার বিষয়ে তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে। দলীয় প্রতীক হিসেবে কেটলির পরিবর্তে শাপলা দাবি করেছিল নাগরিক ঐক্য। ইসি সেই আবেদনও নাকচ করে দিয়েছে।

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করেছে এনসিপি। কিন্তু তাদের চাওয়া শাপলা প্রতীক ইসির সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় নেই। তাই বিধিমালায় থাকা একটি প্রতীক পছন্দ করে ৭ অক্টোবরের মধ্যে জানাতে এনসিপিকে চিঠি দিয়েছিল ইসি। তবে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ই চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইমেইলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর পাঠিয়েছে দলটি।

নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে এনসিপি বলেছে, তারা আশা করে, সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করে এনসিপিকে শাপলা, সাদা শাপলা অথবা লাল শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ দেবে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দুই ঘণ্টা আমরা ওনাদেরকে (সিইসি ও সচিব) প্রশ্ন করেছিলাম যে, প্রতীক যদি না দিতে চান, সেটাতে আপনার ব্যাখ্যা কী? দুই ঘণ্টা ওনারা নিশ্চুপ ছিলেন। শাপলা প্রতীক ছাড়া এনসিপি নিবন্ধন নেবে না এবং এনসিপিও শাপলা ছাড়া নিবন্ধন মানবে না। তিনি বলেন, শাপলা প্রতীক পেতে আইনি ও রাজনৈতিক কোনো বাধা দেখছি না। এরপরেও যদি শাপলা প্রতীক না দেওয়া হয়, তাহলে লড়াই চালিয়ে যাব।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার ব্যাপারে এনসিপির বক্তব্য তিনি শোনেননি। কোন পরিপ্রেক্ষিতে বলছেন, তা বুঝতে পারছেন না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দেখেন একটা জিনিস চিন্তা করতে হলে এটা আমার ফিলিং (অনুভূতি), যেটা আমি আরও বেশ কয়েকবার বলেছি, যারা এনসিপিতে নেতৃত্বে আছেন, যাদের দেখি বা আমাদের সাথে যারা মিটিং করতে আসেন, তারা কিন্তু ২০২৪ এর আন্দোলনে অ্যাকটিভলি পার্টিসিপেট, ইনভলভ ছিলেন। এমন লোকজন কিন্তু এই দলটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তারা (এনসিপি) গণতন্ত্রায়ণের পথে নিজেরা বাধা সৃষ্টি করবে, এটা আমি মনে করি না। তিনি আরও বলেন, আমি তাঁদের দেশপ্রেমিক এবং কোনো অংশেই, তাঁদের কম দেশপ্রেমিক আমি ভাবতে চাই না। তা না হলে তাঁরা এ রকম জান দেওয়ার জন্য রাস্তায় নামতেন না। তাই যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনসিপিকে, তাঁরা জীবনের অনেক ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সুতরাং তাঁরাও দেশের মঙ্গল চান। তাঁরাও দেশের গণতন্ত্র চান। আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্রের উত্তরণটা যাতে সুন্দর হয়, সুষ্ঠু হয়, এ রকম একটা পরিবেশে ওনারা সম্মতি দেবেন। তারা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানেন।

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি সমস্যা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এআই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। এটি বিশ্বের একটি সমস্যা। এআই এর ৫০ শতাংশ সোর্স শনাক্ত করা যায় না। আলোচনায় কেউ কেউ বলেছে ইন্টারনেট বন্ধ করতে। আমরা ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নই। আমি চাই, তথ্য প্রভাব বজায় থাকুক।

সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমদ। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি অংশ নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও। সভায় নির্বাচন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে বাড়তি ট্যারিফ এখনই নয়
পরবর্তী নিবন্ধডিসেম্বরের মধ্যে বন্দরের ২ টার্মিনালের দায়িত্বে বিদেশি অপারেটর