তাজিম সামনে বছর শিশু শ্রেনীতে পড়বে। ছোটকাকির কাছে অ–তে ‘অজু করো‘ থেকে ত–তে ‘তালপিঠা খেতে মিঠা‘ পর্যন্ত পড়তেই চাচাতো বোন আফিয়া আসলো, তাজিম ছোটকাকিকে জানালো– ছোটআম্মু, আমি তালপিঠা খাবো।
আফিয়া বই রেখে বলে উঠল– যখন–তখন তালপিঠা, বললেই হলো!
– তোর কাছে কি শুনেছি! রাগান্বিত হয়ে তাজিমের জবাব।
শুনে আফিয়ারও সেকি রাগ। কি যেন বলতে যাচ্ছে। সে এবার ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছে।
অবস্থা বেগতিক দেখে দুজনকে ছোটআম্মু তালপিঠা সম্পর্কে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে শান্ত করল।
পড়া শেষ হলে তাজিম ছোটআম্মুকে বলল– ছোটআম্মু, এখন না তালপিঠা বানাও।
সাথে সাথে আফিয়া বলল– আবার! এ তো খুব ছুঁচা!
ছোটআম্মু বলল, এই আফিয়া চুপ কর। তালপিঠা খেতে চাইলেই কি তাকে ছুঁচা বলতে হবে! আচ্ছা কাল আমি দুজনকে তালপিঠা বানিয়ে খাওয়াবো।
তাজিম আর আফিয়া বলল, কি মজা! কি মজা! তালপিঠা খাবো, কত মজা পাবো।
আনন্দ শেষ হতে না হতেই পুকুরপাড়ে ডবডব করে দুটো তাল পড়ল। তাজিম বলল– ছোটআম্মু, আমি তাল কুড়াতে যাই? আফিয়াও যাওয়ার জন্য সে কি ব্যাকুল।
রাতে তালতলাতে যাওয়া ঠিক হবে না, ভূত–পেত্নি থাকতে পারে– ছোটআম্মু একথা বলতেই ওরা ভয় পেয়ে গেল খুব। বলল– আচ্ছা ছোটআম্মু এখন তাহলে থাক। কাল দিনের বেলা তালকুড়াবো। আর রাত্রিবেলা তালপিঠা বানিয়ে দিতে হবে কিন্তু।
ছোটআম্মু বলল– আচ্ছা এখন তাহলে তোমরা যাও, খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়।
পরদিন বিকেলবেলা।
ছোটআম্মু তাল, চিনি, নারকেল কোরা, ময়দা ও তেল গোছগাছ করে রাখছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাজিম তিনটি ও আফিয়া দুটি তাল কুড়িয়েছে। তাজিম একটা বেশি বলে আফিয়া একটু লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে । দুজনের মধ্যে এই নিয়ে হালকা বকাবকিও হলো। ছোটআম্মু অনেক বুঝিয়ে–সুঝিয়ে দুজনকে শান্ত করল। আর বলল– এখন যাও, খেলা করে আসো, সন্ধে র আগেই বাড়ি ফিরবে।
আজ আমাদের তালপিঠা বানাবে, একথা সাথীদেরকে না বললে কি হয়! খেলার মাঝে তাজিম আর আফিয়া সবাইকে জানিয়ে দিলো। শুনে মীম বলল, আজ আমাদের ইলিশ মাছ রাঁধবে, আব্বু পাট নিয়ে হাটে গেছে। কিন্তু তাবাস্সুম কিছু না বলে চুপ করে রইল। তাজিম বলল, কি রে তুই কিছু বলছিস না যে! শুনেই তাবাস্সুম ফ্যাল ফ্যাল করে কেঁদে দিলো। সবার মত কি করে বলবে, তারা যে খুব গরীব। বাবা নেই। মা পরের বাড়িতে কাজ করে যায় পাই তা দিয়েই কোন রকম চলে। এই ব্যাপারটা মীম বুঝে সবাইকে বুঝিয়ে দিলো। সবাই খুব দুঃখ প্রকাশ করল আর তাদের বাড়িতে তাবাস্সুমকে দাওয়াত করল। তাবাস্সুম খুব খুশি হলো।
সন্ধের পর নারকেল গাছের মাথায় গোলগাল চাঁদ উঠে হাসছে। উঠোনখানি জোসনায় আলোকিত। হালকা বাতাস, বাতাসে শিউলি ফুল গন্ধ ছড়াচ্ছে। উঠোনের পুকুড়পাড়ে জোস্নালোকিত কাশফুলেরা হাসছে। তা দেখে আকাশের তারকারাও গুনগুন করছে। রান্না ঘরের কাছে উঠোনের পর চুলো। সেই চুলোয় ছোটআম্মু তালপিঠা বানানের জন্য প্রস্তুুত। চুলোর পাশে মাদুরের পাটি ফেলল তাজিম ও আফিয়া। ছোটআম্মু বলল, তোমরা বই পড়ো আর আমি পিঠা বানাই।
তাজিমরা কিছু সময় বই পড়তেই তালপিঠার ঘ্রাণ নাকে এসে ভিড়ল। আর অমনি বই–খাতা পাশের পুঁইমাচার পর রেখে মাদুরের পাটিটা চুলোর আরেকটু কাছে নিয়ে গেল। ছোটআম্মু গরম গরম পিঠা থালে বাড়লো। আফিয়া এক কামড় দিয়ে বলল– ওরে বাবা, একি গরম তাজিম আর মুখে দিলো না ভয়ে। ছোটআম্মু বলল, ঠাণ্ডা হলে খা না! কিন্তু ওদের আর তর সইছে না। যাই হোক, কিছুক্ষণ পর পিঠা ঠাণ্ডা হলে ওরা খাওয়া শুরু করল। ছেটআম্মু মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে। তালের পিঠা এত যে মিঠা! ওরা অনেক পিঠা খেয়ে ফেলল। পরাণটা ভরে উঠল ওদের।