বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টায় দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাত ৯টায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে আমি এসেছি। আপনাদের জানাচ্ছি, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোটি মানুষের প্রিয় মানুষ, দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ধরে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন, তিনি আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে পা রাখবেন, পৌঁছবেন। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। খবর বাসসের।
তিনি বলেন, বিগত প্রায় এক যুগ ধরে তিনি গণতান্ত্রিক আদর্শের নেতৃত্ব নিয়েছেন এবং আমাদের দলকে নেতৃত্ব নিয়েছেন। আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণের নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। আমি আবার বলছি আগামী ২৫ ডিসেম্বর আমাদের সংগ্রামী নেতা তারেক রহমান আমাদের মাঝে আসছেন। শুধু আমাদের পক্ষ থেকে নয়, সকলের পক্ষ থেকে আমরা তার এ আগমনকে স্বাগত জানাই। গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যেসব বাধা সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা মনে করি তারেক রহমান দেশে এলেই সেসব বাধা দূর হয়ে যাবে। তারেক রহমানের দেশে আগমন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য দলের নেতা–কর্মীদের কাছে তিনি সহযোগিতা চান।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন যে, একটা বৈঠক লন্ডনে যেটা হয়েছিল আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিলো যে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে আমাদের নির্বাচন সম্পর্কে যতটুকু শঙ্কা ছিলো সেটা চলে গিয়েছিলো। গতকাল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের যে রেল চলতে শুরু করেছে, সারা দেশের মানুষের মধ্যে আশা–প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। ২০০৯ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন এবং ধীরে ধীরে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তখন থেকেই তিনি বিদেশে থেকেই দল পরিচালনা করছেন, ভার্চুয়ালি সভা ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি পাঁচটি ভিন্ন মামলায় দণ্ডিত হন এবং তার বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি মামলা করা হয়। ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল এবং কোনো কোনো মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি পান। এর পর থেকে তাঁর দেশে ফেরার আলোচনা শুরু হয়। তারেক রহমান শিগগিরই ফিরবেন–এমন কথা বিএনপি নেতারা কয়েক মাস ধরেই বলে আসছেন। তবে কেউ সুনির্দিষ্ট দিন–তারিখ বলেননি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠলে ধারণা করা হচ্ছিল তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরছেন। এই প্রেক্ষাপটে লন্ডন থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ–স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইনকিলাব মঞ্চের প্রার্থী ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ গুলিবিদ্ধ হওয়ার এই ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, সব অপশক্তি নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য যারা কাজ করছে তাদেরই একটা চক্রান্ত বলে আমরা মনে করি। অতি দ্রুত দুস্কৃতকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছি। ফখরুল বলেন, এটা না বলে পারছি না, আমাদের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য বিএনপির দীর্ঘকালের নেতা মির্জা আব্বাস সাহেব ঢাকা–৮ আসনের একজন প্রার্থী। শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ ঘটনার খবর শুনে তিনি স্বাভাবিকভাবে একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সহানুভূতি জানাতে সাথে সাথে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন।
কিন্তু দুরভাগ্য ক্রমে সেই দলের কিছু ব্যক্তি ও সমর্থক ও আরো কিছু চক্রান্তকারী তারা সেখানে সমবেত হয়ে উত্তেজনামূলক শ্লোগান দেয় এবং এক পর্যায়ে তারা মব সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। সেটার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং হুঁশিয়ার করে দিতে চাই সকল পক্ষকে এই ধরনের আচরণ করতে গেলে বিএনপি বসে থাকবে না, বিএনপি তার জবাব সাথে সাথে দেবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।












