আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই মাস হয়ে গেলেও তারেক রহমান কেন দেশে আসতে পারছেন না সেই প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী। জানতে চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার ভয় পাচ্ছে কিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই প্রশ্ন রাখেন।
‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেওয়ার দাবিতে সাংবাদিকদের সংগঠন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। খবর বিডিনিউজের।
রিজভী বলেন, ‘এত দিন হয়ে গেল, দুই মাস; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন দেশে আসলেন না? কী আইনি প্রক্রিয়া আছে? এই আইন তো ‘মানবতাবিরোধী’ আইন, এই আইন স্বার্থ রক্ষা করা হয় ‘মাফিয়াদের, স্বৈরাচারের, খুনিদের’। একটা নির্বাহী আদেশের একটা খোঁচায় এই আইন পরিবর্তন হতে পারে। তাহলে কি আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ভয় পাচ্ছেন?’ এই প্রশ্ন রেখে বিএনপি নেতা বলেন, নাকি আপনাদেরকে কেউ নির্দেশ দিচ্ছে কোনো জায়গা থেকে যে ‘এর বাইরে’ যাওয়া যাবে না, ‘এইভাবে’ কাজ করবেন, তারেক রহমান যেন ফিরতে না পারে সেই ব্যবস্থার জন্য আপনারা ‘এই কাজগুলো’ করুন, ‘এগুলো’ পরিবর্তন করা যাবে না?
‘প্রচলিত আইন এখন কেন’ : সরকার পতনের আন্দোলনকে বিপ্লব দাবি করে রিজভী বলেন, ‘প্রচলিত আইন ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা। ফৌজদারি আইনে এক বছরের বেশি সাজা হলে তাকে কারাগারে যেতে হয়, এই আইন এখন মানা হবে কেন?
আইন তো ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না। এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এত ছাত্র–জনতার এত যে আত্মদান, এত রক্ত এখনও গড়িয়ে যাচ্ছে, এত আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে সরকার, তারা কেন পুরনো আইন দেখিয়ে কাজ করবেন ?
মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিপ্লবী সরকারের কর্মকাণ্ড হবে বৈপ্লবিক। আইনের কথা বলছেন? আইন উপদেষ্টা সাহেব নিশ্চয়ই একজন গুণী মানুষ, আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু বিপ্লবী সরকারের দায়িত্ব তো প্রচলিত কোনো আইনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা নয়। যেভাবে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হল, এই পরিস্থিতি আমরা এই সরকারের কাছ থেকে আশা করতে পারি না। শেখ হাসিনা সরকারের আমলের আইনগুলো টেনে নিয়ে কেন ‘গণতন্ত্রের বিপ্লবী মানুষদেরকে’ যন্ত্রণা দিচ্ছে, এটা গোটা জাতির আজকে জিজ্ঞাসা।
একটি ‘বিপ্লবী সরকার’ দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে রিজভী বলেন, জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝেই তো কাজ করতে হবে। আমরা শেখ হাসিনার সরকারের মত সরকার চাই না। চট্টগ্রামের ডিসি মোনাজাত করছেন কাদেরকে নিয়ে ? আওয়ামী লীগের যে সমস্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী নমিনেশন জমা দিয়েছেন তাদেরকে নিয়ে। এই ধরনের সরকার চায় না বলেই তো এতো রক্তপাত, এত কিছু হল। এটা এই সরকারকে বুঝতে হবে।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএফইউজের সহসভাপতি বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, একেএম মহসিন, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মুরসালীন নোমানীসহ দুই ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।