তারেক ফিরতে চাইলে একদিনের মধ্যে পাস দেওয়া হবে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কামালকে দিয়ে প্রত্যর্পণ শুরু, এমন তথ্য নেই ।। সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা নেই, তারপরও গুলি করে মারা হয়

আজাদী ডেস্ক  | সোমবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ

লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরতে চাইলে একদিনের মধ্যেই তাকে ওয়ান টাইম পাস দিতে পারার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। গতকাল রোববার ঢাকায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এটার নিয়ম হচ্ছে যে, যখন পাসপোর্ট থাকে না বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বলে, তখন কেউ যদি আসতে চান, তাহলে তাকে আমরা ওয়ান টাইম পাস একটা দিয়ে দিই, একবার দেশে আসার জন্য। তো, এটাতে একদিন লাগে। কাজেই এটা উনি যদি আজকে বলেন যে, উনি আসবেন, আগামীকাল হয়তো আমরা এটা দিলে পরশুদিন প্লেনে উঠতে পারবেন। কোনো অসুবিধা নাই। এটা আমরা দিতে পারব। অনুষ্ঠানে তিনি ভারতের সাথে সম্পর্ক, আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যর্পণ এবং বাংলাদেশভারত সীমান্তে হত্যা নিয়েও কথা বলেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংকটময় পরিস্থিতিতে ছেলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে জটিলতা থাকার কথা শনিবার সকালে নিজেই তুলে ধরেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। পরদিন গতকাল দুপুরে ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থান করা তারেকের ফেরা এবং তার ফেসবুক পোস্টের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ওই পোস্টে তারেকের স্পর্শকাতর বক্তব্যের প্রসঙ্গ নিয়ে করা এক প্রশ্নে তিনি বলেন, স্ট্যাটাস স্পর্শকাতর বিষয়, এটা উনি নিজে বলেছেন, পত্রিকায় এসেছে, সেটা আমরা সবাই দেখেছি। আমার জ্ঞান যে পর্যন্ত আমি শুধু এটুকু বলতে পারব যে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ নেই যে উনি আসতে পারবেন না।

বিদেশি কোনো দেশের চাপ আছে কিনা, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা দেশের নাগরিক তার দেশে ফিরতে দেওয়া যাবে না বা দেওয়া হবে না, এটা তো আমার কাছে একটু অস্বাভাবিক লাগছে যে, বাংলাদেশ যদি তার নাগরিককে ফেরত আসতে দিতে চায়, আরেকটি দেশ সেটা কী করে নিষেধ করবে।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আবার বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, তাকে বিদেশ নেওয়ার ব্যবস্থা তার দল করলে, সরকার সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ। এই মুহূর্তে উনি আসলে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। যদি একটু উন্নতি হয় তাহলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেজন্য ব্যবস্থা দলের পক্ষ থেকে করা হয়েছে, আমরা সহায়তা করতেছি। যেটুকু যেখানে সহায়তা প্রয়োজন আমরা করব।

কামালকে দিয়ে প্রত্যর্পণ শুরু, এমন তথ্য নেই: জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসাদুজ্জামান খান কামালকে দিয়ে ভারত থেকে খুব শিগগির প্রত্যর্পণ শুরুর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ভিন্নধর্মী কথা এলো পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের তরফে। গতকাল অনুষ্ঠানে এ বিষয়ক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আসাদুজ্জামান খান কামালের ব্যাপারে দুটো প্রশ্ন আছে। একটিরও কোনো অফিশিয়াল তথ্য আমাদের কাছে নাই। আমরা জানি, উনি ভারতে আছেন কিন্তু অফিশিয়ালি শেয়ার করা হয় নাই। এবং তাকে দিয়ে যে প্রত্যর্পণ শুরু হবে, এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নাই।

সাংবাদিক জানতে চান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা কাজ করছে কিনা। উত্তরে তৌহিদ বলেন, মোফাতে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) সমন্বয়ের অভাব বা মোফা ইস্যুতে সমন্বয়ের অভাব এটা কিছুটা হয়। এটা হয় কি, বিশেষ করে আমাদের অঞ্চলে অনেকেই যে বিষয়ে তার কথা বলা উচিত না, সেটা বলে বসে অনেক সময়। এটা হয়। ভারতে এমন হয় কখনও কখনও, ভারতের মতো ডেমোক্রেসিতেও হয়। কাজেই এগুলো নিয়ে আর বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আসলে পুরো বিষয়টা তো সবাই কনসার্নড। কাজেই অনেকে মনে করে যে আমি এই বিষয়টা জানি, এটা বলি। এটা হয়।

হাসিনাকে ফেরত না দিলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেয়, আমার মনে হয় শুধুই একটি বিষয়ে এই সম্পর্ক আটকে থাকবে না। কারণ বহুমাত্রিক সম্পর্ক তো কিছু দেশের সাথেই আছে, ভারতের সাথেও আছে। আমাদের তিস্তার পানি বলুন বা বর্ডার কিলিং বন্ধ করার কথা বলুন, এগুলো তো পাশাপাশি থাকবে। সেখানে ফেরত দেওয়া, না দেওয়ার উপরে একটা তো আরেকটা উপর নির্ভরশীল না।

তিনি বলেন, স্বার্থ তো থেকেই যাবে। কাজেই আমাদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কতদিন আমরা জানি না, তবে আমরা অবশ্যই চাই যে, যেহেতু তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাহলে ফেরত দেওয়া হবে, যাতে শাস্তি কার্যকর করা যায়। কিন্তু এটার কারণে বাকি সব আটকে থাকবে সেটা আমি মনে করি না।

সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা নেই, তারপরও গুলি করে মারা হয় : বিগত সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উদাহরণ দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উষ্ণ সম্পর্ক ছিল ভারতের সঙ্গে। আপনারা কি এই কথা হলফ করে বলতে পারেন যে, বাংলাদেশের মানুষ এতে খুব সন্তুষ্ট ছিল কিনা, যেই পর্যায়ে সম্পর্ক ছিল। আমার কাছে এবং আরও অনেকের কাছে মনে হয়েছে, উষ্ণ সম্পর্ক দুটি সরকারের মাঝে ছিল। জনগণের ভূমিকা সেখানে অনেক কম ছিল। অনেক অভিযোগ থাকলেও তৎকালীন সরকার বিবেচনায় নেয়নি। সীমান্ত হত্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশভারত সীমান্ত পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত, যেখানে যুদ্ধাবস্থা নেই, তারপরও গুলি করে মারা হয়। পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কোনো সীমান্ত এ রকম নেই। এটার কোনো সমাধান আমি আপাতত দেখতে পাচ্ছি না। সীমান্ত হত্যা হচ্ছে। আমরা নিন্দা করতে পারি, প্রতিবাদ করতে পারি; করে যাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপের জন্য দ্রুতগামী সি-ট্রাক নির্মাণ করা হয়েছে
পরবর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত