জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে আইনের চোখে পলাতক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সর্বোচ্চ ১৩ বছর কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনাকারী দুকদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তবে সাজার বিষয়ে জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে ২ অগাস্ট পর্যন্ত। ওইদিন এই মামলারয় রায় ঘোষণা করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার রায়ের এই দিন ঠিক করে দিয়েছেন।
এদিন সাক্ষ্য, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয়। রায়ের তারিখ ঘোষণার পর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এ মামলায় ২৬(২) ধারায়
সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ ১৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি ১৩ বছরের কারাদণ্ডের প্রত্যাশা করছি।
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ–পরিচালক জহিরুল হুদা। তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকেও মামলায় আসামি করা হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করেছে। মামলাটি শুরু হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু পরবর্তীতে সকল পর্যালোচনা করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ১৮টা এঙিবিটের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা তার অবৈধ উপার্জন এবং ৫৮ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬ (২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। ২৬ (২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি যেহেতু তিনি সবকিছু জানেন, তিনি সম্পদ বিবরণী ঘোষণা করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে আইনজীবীরা পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তারপরও তিনি আদালতে উপস্থিত হন নাই। সুতরাং এই যে আদালত এবং আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করা– আমরা মনে করি তিনি এটা সঠিক কাজ করেননি। দুদকের জ্যেষ্ঠ এই কৌঁসুলি বলেন, আমরা ৪২টি সাক্ষী দিয়েছি। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা এই অপরাধটা প্রমাণ করতে পেরেছি। তার (তারেক রহমান) এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ও তার স্ত্রী বিরুদ্ধে এই মামলাটি হয় ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন তারেক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেড় বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি স্ত্রী–সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান, তারপর আর দেশে ফেরেননি। বিদেশে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি, এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন।
এই মামলায় তারেকের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন দুদকের উপ–পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। পরে উচ্চ আদালত ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেয়।