দুর্নীতির মামলায় তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের কারাদণ্ডের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছে, ‘ফরমায়েশী’ এই রায় জনগণ মানবে না। গতকাল বুধবার ঢাকার আদালতে রায়ের পর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজকে ফরমায়েসী রায় সরকার প্রধানের হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। দেশজুড়ে যখন আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে, সেটাকে বিভ্রান্ত করতে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের এটি একটি কূটচাল। এক দফার আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিহিংসা মেটানো হয়েছে। তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের মামলার ফরমায়েশী রায় জনগণ মানে না। দেশের জনগণ বিচারের নামে এই প্রহসন, এই ফরমায়েসী রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।’ খবর বিডিনিউজের।
ঘোষিত আয়ের বাইরে সম্পদের মালিক হওয়ার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুই ধারায় ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেককে ৩ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এই রায়ের সময় ঢাকার আদালতে বিক্ষোভ করেছিল বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। তারা এতে ‘ফরমায়েশী’ রায় আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যানের কথাও জানিয়েছিলেন।
রায়ে বিএনপির এমন প্রতিক্রিয়ার জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটা দায়েরের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে তাদেরই (বিএনপি) নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা প্রধানের যথেষ্ট সখ্যতা ছিল, সেটা সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। তারাই দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছিল। তারা (বিএনপি) যদি ফরমায়েশি বলে, তাহলে আইন সম্পর্কে তাদের সম্যক জ্ঞান আছে কি না আমার সন্দেহ।’
ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, ২০০৭ সালে তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকার প্রতিপক্ষ দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে জিয়া পরিবারকে হেয় ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে উচ্ছেদ করার গভীর চক্রান্তে মেতে বাংলাদেশে অগণিত মানুষের সমর্থন ধন্য দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগে মামলাটি দিয়েছিল। কারণ তথাকথিত জরুরি সরকার ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। জরুরি সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার নামে ১৫টি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মামলা করা হলেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় দখলের পর প্রধানমন্ত্রী পদের ক্ষমতা ব্যবহার করে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। অথচ তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের এই মামলা চলার মতো কোনো আইনগত ভিত্তি উপাদান না থাকা সত্ত্বেও হিংসা চরিতার্থ করার আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান দুদক দিয়ে শেখ হাসিনা তার নীল নকশা কার্যকর করার জন্য জোড়াতালি দিয়ে প্রতিহিংসা পুরণের রায় বের করা হয়েছে।’
মামলায় তারেক ও জোবায়দার সম্পদ নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ‘মিথ্যা, কাল্পনিক, সাজানো ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, মামলায় দৈনিক দিনকাল (বর্তমান সরকার কর্তৃক ডিক্লারেশন স্থগিতের পর বন্ধ) পত্রিকার সম্পদ ও মালিকানা তারেক রহমান নিজস্ব সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা মনগড়া। জোবায়দা রহমানের মামলায় সম্পদ বিররণীতে ব্যাংকে গচ্ছিত দুটি এফডিআরের অর্থ তারেক রহমানের জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত অর্থ দ্বারা খোলার কথা বলা হয়েছে, যা আসলে জোবায়দার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বলে দাবি করেন ফখরুল।
এই রায় বাতিলের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, এসব করে বিএনপির চলমান আন্দোলন দমানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি হিংসার পথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের মজলুম নেতা তারেক রহমানকে নতজানু করতে পারবেন না।
বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি দেবে কি না– সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কর্মসূচি তো একটাই। এই সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত –একদফা দাবির মধ্যেই সব কিছু আছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।