তারেককে ফেরাতে আইনি জটিলতা আছে, প্রচেষ্টা চলমান : প্রধানমন্ত্রী

| বৃহস্পতিবার , ২৭ জুন, ২০২৪ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কিছু আইনগত জটিলতা রয়েছে বলে সংসদকে অবহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে একইসঙ্গে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা ও আইনি কার্যক্রম চলমান থাকার তথ্য দিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। এ দিন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব জটিলতা আইনি প্রক্রিয়াতেই নিরসন করে এই অপরাধীকে (তারেক রহমান) দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার প্রাপ্য সাজার মুখোমুখি করার বিষয়ে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আশা করা যায়, এই প্রক্রিয়ায় ফলাফল আমরা অচিরেই দেখতে সক্ষম হব। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এ উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমানসহ ১৫ জন আসামি বর্তমানে পলাতক। পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দীন, মো. হারিছ চৌধরী ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।

সরকারপ্রধান বলেন, পলাতক অন্য আসামিরা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেসব দেশের সঙ্গে আলাপআলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে তিনি নিজেই বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন বলে সংসদকে জানান। আন্তর্জাতিক ফোরামে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতেও এ বিষয়ে তাদের ব্যক্তিগত সহযোগিতাও কামনাও করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে খুনিদের অবস্থানের বিষয়ে আইনগত জটিলতা থাকায় এ বিষয়ে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বর্তমানে প্রচলিত কূটনীতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন অনুযায়ীও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের মধ্যে নূর চৌধুরী বর্তমানে সপরিবারে কানাডায়, আব্দুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম ডালিম পাকিস্তান বা লিবিয়ায়, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র এবং মোসলেহ উদ্দিন খান ভারতে অবস্থান করছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া আজিজ পাশা জিম্বাবুয়ে অবস্থানকালে মারা যায় বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত ১২ জন আসামির মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

রাজশাহী৩ আসনের মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদের প্রশ্নের জবাবে জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনি জিয়া তো রক্তাক্ত হাতেই খাবার খেতে বসতেন এবং খেতে খেতেই ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর করতেন। জিয়ার নির্দেশে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার ঘটনা স্বাধীন দেশের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি হিসাব মতে জিয়া ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র দু’মাসের মধ্যে ১ হাজার ১৪৩ জন সৈনিককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল।

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে একাধারে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে। ইতিহাসের এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সংশ্লিষ্টতা ছিল। খুনি ফারুকরশিদরা আগে থেকেই জাতির পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে, যেটা জিয়া জানত। তিনি বলেন, জিয়া সেনাছাউনিতে বসে দলছুট রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিএনপি গঠন করে। তিনি যেমন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন, তেমনি অবৈধভাবে বিএনপি সৃষ্টি করেন।

সশস্ত্র বাহিনীর জন্য রাশিয়া, চীন, তুরস্ক ও ভারতসহ সমরাস্ত্র শিল্পে উন্নত বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র কেনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে সংসদকে বলেছেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিন্দু সেজে সীতাকুণ্ডের মন্দিরে দুই আসামি
পরবর্তী নিবন্ধডিএসই পরিচালকের শেয়ার কারসাজি, তদন্তের নির্দেশ