তরুণ সমাজকে অধ্যয়ন ও চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করার মহৎ প্রয়াস থেকে ‘অসীম জ্ঞান, অবাধ মনন’ এই স্লোগানকে ধারণ করে সমাজ সমীক্ষা সংঘ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সংগঠনটি বিশ্বাস করে, এদেশের যুবসমাজই বাংলাদেশকে একটি শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের ক্লাস রুমে মোমবাতির আলোয় এবং বিশদ বাংলার ছোট সেই রুমের স্বপ্নগুলো আজ ডালপালা মেলে ধরেছে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের তরুণ সমাজের কাছে।
জন্মলগ্ন থেকেই সমাজ সমীক্ষা সংঘ একটি সমাজ সচেতন সংগঠন হিসেবে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছে। এদেশের তরুণ সমাজকে অধ্যয়ন ও চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য দেশের বিভিন্ন সমস্যাবলী সম্পর্কে নিয়মিত সেমিনার, পাঠচক্র, কর্মশালার আয়োজন করেছে। নানা বিষয়ে গবেষণা, নারী-শিশু ও অধিকার বঞ্চিত মানুষসহ দেশের জনগণের সামগ্রিক বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ, সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করেছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন গুরুতপূর্ণ বিষয়ে নিয়মিত অধ্যয়ন, আলোচনার আয়োজন করেছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও উদ্যোগ তাদের সামগ্রিক কার্যক্রমের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
প্রফেসর ড. গোলাম মুস্তাফা এবং আহমেদ খসরু ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু এবং নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে আছেন শিহাব চৌধুরী বিপ্লব।
সংগঠনের আয়োজনে মাস্টারদা সূর্যসেন, ড. রশীদ আল ফারুকী, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম, কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের নামে এ পর্যন্ত ৬টি স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাজ সমীক্ষা সংঘের আরেকটি নিয়মিত কর্মসূচি হচ্ছে ‘জনগণের কল্যাণে কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক বাজেট প্রণয়ন বিষয়ক সেমিনার। প্রায় প্রতি বছর বাজেট বিষয়ে সেমিনারে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে তাদের ওপর বাজেটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় এবং জনবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সরকারের প্রতি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। সংগঠনের উদ্যোগে কর্ণফুলী ৩য় সেতু ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সেমিনারের আয়োজন সংগঠনের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। দেশের একমাত্র পেশাদার বিজ্ঞান বক্তা ডিসকাশন প্রজেক্টের আসিফকে নিয়ে দর্শনীর বিনিময়ে বিজ্ঞান বক্তৃতা প্রশংসিত আরেকটি উদ্যোগ।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানানো এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নগরীর স্কুলগুলোর অংশগ্রহণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে আয়োজিত দেয়ালিকা উৎসব সমাজ সমীক্ষা সংঘের আরেকটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। বর্ষবরণ উৎসবসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও পাঠচক্রের আয়োজন করেছে।
রাজাকার-আলবদরদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে সমমনা সংগঠনগুলোকে নিয়ে সমাজ সমীক্ষা সংঘ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের সাথে সংগতিপূর্ণ যেকোনো আন্দোলনে সংগঠনটি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সম্মিলিত মে দিবস উদযাপন পরিষদের ব্যানারে টানা ১১ বছর সমমনা ১০টি সংগঠনের অংশগ্রহণে মে দিবস পালন করা হচ্ছে। করোনাকালীন এই অনুষ্ঠানের পরিধি কমিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৬০টি শ্রমিক পরিবারের মাঝে ১০ দিনের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ প্রশংসিত উদ্যোগ ছিল। এছাড়া করোনার সময়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় সমাজ সমীক্ষা সংঘ নিরবচ্ছিনভাবে কাজ করে গেছে। সংগঠনের গৃহীত উদ্যোগের পাশাপাশি সকল মানবিক আহ্বানে সমাজ সমীক্ষা সংঘ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
সমাজ সমীক্ষা সংঘ তার কাজের ধারাবাহিকতায় টানা সপ্তমবার আয়োজন করেছে লোকসংস্কৃতি উৎসব। করোনাকালীন অচলায়তনের পূর্বে ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৭টি লোকসংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করে। আমাদের সংস্কৃতির মূল প্রাণ লোক সংস্কৃতি আজ হুমকির মুখে।
লোকায়ত সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে আমাদেরই। এই উদ্দেশ্য থেকেই মাটিবর্তী সংস্কৃতি মানুষের মাঝে তুলে ধরতে তারা আয়োজন করে লোক সংস্কৃতি উৎসব। দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের পাশাপাশি লোকায়ত শিল্পীরা এই আয়োজনসমূহে অংশগ্রহণ করেছেন। লোকায়ত শিল্পে অবদানের জন্য প্রতিটি উৎসবে বিশিষ্ট গুণীজনদের ড. রশীদ আল ফারুকী সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অযুত তারুণ্যর কণ্ঠস্বর হিসেবে সমাজ সমীক্ষা সংঘ দেশ ও সমাজের প্রতি নিবেদিত প্রাণ একদল কর্মী সৃষ্টির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা চলমান থাকবে। ধারাবাহিক ও ব্যাতিক্রমী কর্মসূচির মাধ্যমে মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির বিকাশ, অসাম্প্রদায়িক, উদার, গণতান্ত্রিক, বঞ্চনা ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সমাজ সমীক্ষা সংঘের পথচলা অব্যাহত থাকবে।