তারুণ্যের উচ্ছ্বাস : আবৃত্তিতে দেড় দশকের দীপ্ত পথচলা

সংস্কৃতি চর্চায় চট্টগ্রাম

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বর্তমানে যে ক’টি আবৃত্তি সংগঠন বছরব্যাপী নানা আয়োজনে সক্রিয় ও সফলতার সাথে পথ চলছে, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস তাদের অন্যতম। ২০০৭ সালের মার্চে চট্টগ্রামের কবিতা প্রিয় কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের যাত্রা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা হলেন, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, কাজী গোলাম কিবরিয়া, অনুপ বড়ুয়া, মোস্তাফিজুর রহমান ও মিঠু তলাপাত্র।
তারুণ্যের উচ্ছ্বাস বিগত সময়ে প্রায় দুই শতাধিক বিষয়ভিত্তিক, নিরীক্ষাধর্মী উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ২০১০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে পাঁচ মাসব্যাপী শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি কর্মশালার আয়োজন করে আসছে। কর্মশালায় এ পর্যন্ত সহস্রাধিক প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষন নিয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের শিশু বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি ভাগ্যধন বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. মুজাহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রাবণী দাশগুপ্তাসহ ২১ সদস্যের কার্যকরী পরিষদ।
প্রতিষ্ঠার পর হতেই তারুণ্যের উচ্ছ্বাস বিষয় ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রথম আয়োজন ছিল বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন। ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আয়োজনের শিরোনাম ছিল ‘এসো মাতি বঙ্গীয় পার্বনে’। এরপর একই বছরের ২৭ আগস্ট জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবসে ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি তারুণ্যের উচ্ছ্বাস বছরব্যাপী নিয়মিত ও বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং প্রযোজনার মঞ্চায়ন করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একুশের প্রহরে ‘চিরদিনের কবিতা’, তরুণ শিল্পীদের একক পরিবেশনার মঞ্চ ‘শুদ্ধ হও, আপন আলোয়’, পহেলা আষাঢ় ‘বর্ষাবরণ’, মহান মে দিবস উদ্‌যাপন, নির্বাচিত কবিদের কবিতায় অনুষ্ঠান, ছোটদের নিয়ে বিশেষ আবৃত্তি অনুষ্ঠান, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন, অর্ধযুগ পূর্তিতে আবৃত্তি উৎসব, সাত বছর পূর্তিতে চারদিনের শ্রুতিনাট্য উৎসব, এক দশক পূর্তিতে আবৃত্তি উৎসব, কুমিল্লায় ও ফেনীতে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের আবৃত্তি উৎসব, নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘কবিতা শোণিতে, স্বপ্নের ধ্বনিতে’ ইত্যাদি। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে দেশের বাইরে একধিকবার সফলতার সাথে নানা আয়োজনে অংশ নিয়েছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ২০১৭ সাল থেকে কিংবদন্তী আবৃত্তিশিল্পী গোলাম মুস্তাফা স্মরণে প্রবর্তন করেছে ‘গোলাম মুস্তাফা স্মৃতি সম্মাননা’।
‘চট্টগ্রাম কবিতার শহর’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতি বছর তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আয়োজন করে চারদিন ব্যাপী কবিতা উৎসব। চট্টগ্রামসহ সারাদেশের কবি, আবৃত্তিশিল্পী ও ছড়াকারদের অংশগ্রহণে এ উৎসব বর্তমানে চট্টগ্রাম তথা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গণের অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ৩৫টি বৃন্দ পরিবেশনা মঞ্চস্থ করে। এর মধ্যে বড়দের বিভাগের ২০টি এবং শিশু বিভাগের ১৫টি প্রযোজনা রয়েছে। এ প্রযোজনাগুলো তারুণ্যের উচ্ছ্বাস এবং আমন্ত্রিত বিভিন্ন মঞ্চে প্রায় শতাধিকবার মঞ্চস্থ হয়। কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত নাটক ‘ঝিলিমিলি’ শ্রুতিনাট্যরুপে মঞ্চে এনেছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। এটি তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা। দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ আবৃত্তি প্রযোজনা জননী জন্মভূমি। তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা জসীম উদ্দীনের ‘নঙী কাঁথার মাঠ’। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই প্রযোজনাটি দর্শকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা ‘সমীপে মা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত নতুন আবৃত্তি প্রযোজনা ‘হে মহাসাগর’, এটির প্রথম মঞ্চায়ন হয় ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
বিগত দেড় দশক চট্টগ্রামের সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয় ও সরব ভূমিকা রেখেছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। নিয়মিত নানা আয়োজন ও চর্চার পাশাপাশি তারুণ্যের উচ্ছ্বাস বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। পাশাপাশি তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের আয়োজনে দর্শনীর বিনিময়ে দেশের প্রথম গল্প প্রযোজনা ‘সবচেয়ে সুন্দর’ ঢাকার পর প্রথম বারের মত চট্টগ্রামে মঞ্চস্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত করার প্রত্যয়ে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ২০১০ সাল থেকে বিজয়ের মাসে ডিসি হিল প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দুই দিনের ‘বিজয় উৎসব’ আয়োজন করেছে। ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ চারটি জেলা ও ভারতের তিনটি রাজ্যের আবৃত্তিশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘সীমানা পেড়িয়ে কবিতার মোহনায়’ শিরোনামের এক আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সংগঠনের আগামী পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে মঞ্চে ও প্রয়োজনে রাজপথে সোচ্চার ছিল। পাশাপাশি আগামীতে সংগঠনের বড়দের ও ছোটদের বিভাগের শিল্পীদের নিয়ে দুইটি আবৃত্তি অ্যালবাম প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আর নতুন দুইটি পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনার মহড়া শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামকে কবিতার শহর আখ্যা দিয়ে বিগত দেড় দশকে সংগঠনটি সমৃদ্ধ হয়েছে নানা অনুষ্ঠান, উৎসবে, অভিজ্ঞতায়। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আলো জ্বালবার মশাল হিসেবে বেছে নিয়েছে কবিতার শুদ্ধ কথামালাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ঢাকা সমিতির ডায়েট চার্ট ও ছাত্র বৃত্তি প্রদান
পরবর্তী নিবন্ধসিভিও পেট্রোক্যামিকেলের সাথে বিপিসির ন্যাপথা ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর