সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে প্রাণ হারানোর বিষয়টি ঢেকে দিতেই সরকারি স্থাপনায় হামলার বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারি কোনো স্থাপনায় হামলায় বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে তিনি বলেছেন, তার দল কখনো এমন কাজ করে না।
গতকাল বুধবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএনপি নেতা এসব মন্তব্য করেন। এবারের আন্দোলনকে ‘আই ওপেনার’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন থামবে না।’ খবর বিডিনিউজের।
গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি মহাসচিব বিবৃতির মাধ্যমে দলের বক্তব্য উপস্থাপন করে আসছিলেন। কারফিউ ৭ ঘণ্টা শিথিল থাকার মধ্যে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কত জন এই আন্দোলনে মারা গেছে, কত জন আহত হয়েছে এটা তারা (সরকার) জানাচ্ছে না। উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, ওরা গোটা জাতিকে ভ্রান্ত ধারণা দিতে চায়। এই আন্দোলন শত শত প্রাণ কেড়ে নিল, সেই ব্যাপারে তারা (সরকার) কোনো কথা বলছে না। পুলিশের গুলিতে যে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে সেটার ব্যাপারে কিছু বলছে না। আজকে বলছে যে, যদি কেউ আহত হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে দেখে প্রয়োজনে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করবে। অথচ এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের দায়িত্ব যে, যদি এই ধরনের ঘটনায় কেউ আহত হয়, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। বিএনপি নেতা বলেন, বিষয়টা পুরোপুরি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি স্থাপনায় হামলা–ভাঙচুরের যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো সামনে আনতে চায়। এখানে বিএনপির ওপর দোষ চাপাতে চায়। সংঘাত থামার পর সহিংসতার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি–জামায়াতকে দায়ী করে বক্তব্য আসে। নাশকতার অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে ফখরুল বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে থাকা আর নাশকতার মদদ দেওয়া এক জিনিস নাকি? নাশকতার মদদ তো দিচ্ছেন তারা (সরকার)। তারা চাচ্ছেন যে এখানে নাশকতা হোক, প্রবলেম হোক। ৪০ বছরের ইতিহাসে নাই যে, বিএনপি রাষ্ট্রীয় স্থাপনার ওপরে আক্রমণ করেছে, সেখানে কোনো সমস্যা তৈরি করেছে–আপনি পাবেন না খুঁজে। আজ পর্যন্ত যত আন্দোলন হয়েছে কোথাও কোনো রকমের রাষ্ট্রীয় স্থাপনার ওপরে বিএনপি কখনও আক্রমণ করে নাই।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সভায় নাশকতার যে ভিডিও দেখানো হয়েছে, সেখানে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যাচার’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ক্ষমতাসীন শ্রমিক লীগের একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে যে, তাকে টাকা দেয়া হয়েছিল বিআরটিসির বাসে আগুন লাগানোর জন্য। বিএনপির প্রায় দুই হাজার নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযোগ করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, আমরা কারফিউ প্রত্যাহার চাই। জনগণের শান্তির স্বার্থে কারফিউ অবশ্যই প্রত্যাহার করা উচিত। জনগণ যাতে সত্য না জানতে পারে সেজন্য সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা ও সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে রেখেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্রদের আন্দোলনের সময় বিশ্ব নেতাদেরকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস আহ্বান জানানোর পর সরকারি দলের প্রতিক্রিয়া নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, ড. ইউনূস সম্পর্কে আজকে নয়, বহুদিন ধরে তারা তার ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও তাকে হেয়প্রতিপন্ন করছে, তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, সাজাও দিয়েছে। তিনি নাকি রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। সত্য কথা বললেই রাষ্ট্রবিরোধী হয়ে যায়, সত্য কথা বললে গণবিরোধী হবে। গণবিরোধী তো হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আসল রাষ্ট্রবিরোধী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। গত ১৫ বছর যাবৎ তারা যতগুলো কাজ করেছে, সবগুলো এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেছে, সবগুলো জনগণের বিরুদ্ধে গেছে, বলেন বিএনপি নেতা।