তারা কেউ ডাকাতি করছেন, কেউ ডাকাতদের ধরিয়ে দিচ্ছেন!

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রতিশ্রুতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ১৩৯ জন জলদস্যু। মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপকূলের এসব জলদস্যু অধিকাংশই এখন জামিনে মুক্ত। তাদের মধ্যে কেউ ডাকাতি করছেন আবার কেউ ডাকাতদের ধরিয়ে দিচ্ছেন!
মহেশখালী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর কালামারছড়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রথম দফায় মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের ৬টি বাহিনীর ৪৩ জন জলদস্যু ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭ হাজার ৬৩৭টি গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১২টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৯৬ জন জলদস্যু ১৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮৪ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। যারা সবাই মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ার জলদস্যু এবং অস্ত্রের কারিগর। সে সময় তাদের নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং একটি রজনীগন্ধার স্টিক দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের আরও ৫০ হাজার টাকাসহ নানা প্রণোদনা দেয়া হয়। সেই জলদস্যুদের অধিকাংশই এখন জামিনে মুক্ত। সোনাদিয়ার ইউপি মেম্বার একরাম মিয়া বলেন, জামিনে মুক্ত অনেক জলদস্যুই ফিরে গেছেন পুরনো পেশায়। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ফিরতে পারেননি। গত ২৭ ডিসেম্বর সোনাদিয়ায় ধরা পড়া ৫ জনের মধ্যেও রয়েছে কয়েকজন আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যু। আবার এসব জলদস্যুকেও পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন সোনাদিয়ার সাবেক জলদস্যুরাই। আত্মস্বীকৃত কিছু জলদস্যু জামিনে মুক্ত হয়ে শুধু স্বাভাবিক জীবনেই ফেরার চেষ্টা করছেন না, তারা হাতেনাতেও জলদস্যুদের ধরিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, তাদের কেউ কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করলেও অনেকেই আবার গডফাদার বনে গেছে। তারা নিজেরা সরাসরি ডাকাতি কাজে অংশ না নিয়ে নতুন বাহিনী তৈরি করে জলদস্যুতা করছে।
তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেকউল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালী উপকূলে মূলত ডাকাতি করছে চকরিয়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারার জলদস্যুরা। তারা মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপকূলে এসে ডাকাতি করে আর বদনাম হয় এখানকার লোকদের।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আমানউল্লাহ ও নুর মোহাম্মদ বলেন, সম্প্রতি জামিনে মুক্ত তিন সাবেক জলদস্যু শাহীন মিয়া, সুমন মিয়া ও মিজান সিকদারের নেতৃত্বেই এলাকাবাসী ধরিয়ে দিয়েছেন ৫ জলদস্যুকে। সোনাদিয়ার সাবেক জলদস্যু শাহীন মিয়া, সুমন মিয়া ও মিজান সিকদার বলেন, আমরা আর অতীতের অন্ধকার জীবনে ফিরে যেতে চাই না। আমরা চাই জলদস্যুমুক্ত সোনাদিয়া।
মহেশখালী সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম আরও বলেন, আত্মস্বীকৃত অনেক জলদস্যুর বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৬/১৭টি মামলা ছিল। যারা জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে আসে তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে শুরু করে তাদের হাতে খুনের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজন। এর ফলে অনেকেই জামিনে মুক্ত হলেও আতংকে এলাকায় ফিরতে পারছেন না। ওদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও দায়িত্ব নিতে চান না। তাই বিষয়টি জটিল। আর এ জন্য রাজনৈতিক পদক্ষেপ দরকার। তবে সাবেক জলদস্যুদের ব্যাপারে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে আত্মসমর্পণের পরেও যদি কেউ আগের অবস্থায় ফিরে যান, তাহলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাত বছরে সর্বোচ্চ ফল
পরবর্তী নিবন্ধবারভিডায় প্রশাসক নিয়োগ