চৈত্রের শেষ প্রান্তে প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে তাপদাহ। গতকাল দিনভর এই তাপদাহে শরীর বেয়ে পড়েছে ঘাম,-এ যেন এক অস্বস্তিকর অবস্থা। সেই বৈশাখ শুরু না হতেই প্রকৃতির এমন বৈপরিত্যে নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। এরমধ্যে আবার চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মুখে মাস্ক লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বার বার। এ গরমে মাস্ক আরেক নতুন যন্ত্রণা। আবহওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানালেন-আজও তাপদাহ থাকবে। অন্যদিকে তাপদাহের সাথে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে নগরীর প্রায় বেশিরভাগ এলাকায় দিনে একাধিকবার লোডশেডিং হচ্ছে। একে তো উচ্চ তাপমাত্রা, তার ওপর লোডশেডিং, সব মিলিয়ে নগরীর বাসিন্দাদের নরক যন্ত্রণাই ভোগ করতে হয়েছে। গ্রামীণ জীবনেও চলছে একই অবস্থা। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং। পল্লীর জনজীবনে বাড়ছে ভোগান্তি।
গতকাল নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে দেখা গেছে, তাপদাহে ক্লান্ত মানুষ খুঁজছে ছায়া ও বিশ্রাম। আরোহী থাকা সত্ত্বেও রিকশা চালকরা যাত্রী তুলতে চাইছে না। আবার গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক কম। এছাড়া ফুটপাতে শরবতের দোকানে দেখা যায় সাধারণ মানুষের ভিড়। প্রাণিকূলেও বেড়েছে পানির জন্য ছটফটানি। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি এপ্রিল মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ১-২টি মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এছাড়া মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে। অন্যদিকে মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১-২টি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাদ তংচইঙ্গা গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াম, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীকালও (আজ) তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে। বৃষ্টির সম্ভাবনা তেমন একটা নেই বললেই চলে। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে।
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু বকর সিদ্দিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, এখন যেহেতু করোনা পরিস্থিতি, তাই গরম যতই হোক, অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মুখে মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া বেশ কিছু নিয়ম কানুন মানতে হবে। তীব্র গরমে শরীর থেকে প্রচুর লবণ বের হয়ে যায়। তাই ওর্যাল স্যালাইন ও ডাব খেতে হবে। অনেকে বাইরের রোদ থেকে বাসায় গিয়ে ফ্রিজের পানি পান করে কিংবা ঠান্ডা পানিতে গোসল করে। এটি কখনোই করা যাবে না। বাসায় পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল কিংবা পানি পান করতে হবে। না হলে মাথা ব্যথা, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরমের সাথে মানানসই কাপড় চোপড় পরতে হবে। বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হতে হবে। এসব নিয়ম কানুন মেনে চললে গরমে সুস্থ থাকা সম্ভব।
নগরীর কাজির দেউরি এলাকার দিনমজুর আবদুল হক বলেন, গত কয়েকদিনের গরমে কাজ করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। কিছুক্ষণ কাজ করলে ক্লান্তি এসে যায়। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, কাজ না করলে খাবো কি।
লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী সুলতানা আকতার বলেন, গরমে এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। এরমধ্যে আবার বিদ্যুৎ থাকে না। তাই আমাদের এক প্রকার নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। গরমের কারণে বাচ্চারা পড়াশুনা করতে পারে না। এখন ঠিকমতো পানি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে, ছায়া আছে এমন স্থানে রিকশা রেখে বিশ্রাম করছেন রিকশা চালকরা। তাদের একজন ২ নং গেট এলাকার রিকশাচালক আবদুল হক। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ছয়টার সময় রাস্তায় নেমে দশটা পর্যন্ত রিকশা চালানো যায়। এরপর গরমে রাস্তায় আর থাকা যায় না। তাই প্রতিদিন দশটা পর্যন্ত রিকশা চালাই। আবার বিকাল পাঁচটার পর বাইরে আসি। যে পরিমাণ কাজ করতে পারি, তা দিয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে যায়। কারণ এখন আমাদের আয়ও কমে গেছে। এ গরমে টানা দুই ঘণ্টার বেশি একাধারে রিকশা চালানো সম্ভব নয়। একবার রোদের মধ্যে কোথাও গেলে বিশ্রাম নিতে হয়।
এদিকে রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানান, ইদানিং রাউজানে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। অস্বস্তিকর গরমে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি।