সিলেট টেস্টে হেরে প্রচন্ড চাপে বাংলাদেশ। কারণ সিরিজ জিততে জিম্বাবুয়ের কেবল ড্র করলেই যথেষ্ট। কিন্তু সিরিজ বাঁচাতে বাংলাদেশের জয় ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের দিনের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের পরীক্ষা নিচ্ছিল জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। দিনের প্রথম দুই সেশনে বাংলাদেশের বোলার এবং ফিল্ডারদের হতাশায় ডুবিয়ে দারুণভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু সারা দিনের প্রচন্ড রোদের পর শেষ বিকেলে হঠাৎ করে আকাশে জমে মেঘ। শুরু হয় বাতাস। আর সে বাতাসই যেন স্বস্তি ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ শিবিরে। দারুণভাবে দিন শুরু করা জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে সংগ্রহ করেছে ৯ উইকেটে ২২৭ রান। অথচ চা বিরতি পর্যন্ত ২ উইকেটে ১৬১ রান করা ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে। শেষ সেশনের ২৪ ওভারে মাত্র ৬৬ রান করতে হারায় ৭ উইকেট। আর শেষ সেশনে জিম্বাবুয়েকে রুখে দেওয়ার নায়ক তাইজুল। চমৎকার বোলিংয়ে ৬০ রানে ৫ উইকেট নেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার। ৫৩ টেস্টে এটি তার ১৬তম পাঁচ উইকেট। একাদশে ফেরার দিন নাঈমও দারুণ বোলিং করে নিয়েছে ২ উইকেট। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে দিনের শুরুতে হতাশই হতে হয় স্বাগতিকদের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে হাসান মাহমুদের চমৎকার ডেলিভারিতে অল্পের জন্য বোল্ড হননি ব্রায়ান বেনেট। এরপর সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন বেনেট। অন্য প্রান্তে বেন কারানও ছিলেন দারুণ গোছালো। প্রথম দশ ওভারে গড়ে চারের বেশি রান তুলেন দুই ওপেনার। অষ্টম ওভারে ভাঙতে পারতো এই জুটি। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্লিপে কারানের সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি সাদমান ইসলাম। পরে প্রান্ত বদলে নতুন স্পেলে বোলিংয়ে এসে জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তানজিম। অভিষিক্ত পেসারের লাফিয়ে উঠা বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন বেনেট। ৩৩ বলে ২১ রান করে ফিরেন তিনি। তিন নম্বরে নেমে নিক ওয়েলচ ব্যাটিং করেন অনেকটা ওয়ানডে মেজাজে। ১৮তম ওভারে বল হাতে নেন তাইজুল। নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই তাইজুল বোল্ড করে ফেরান কারানকে। ২১ রানে থামেন এই ওপেনার। এরপর শুরু হয় ওয়েলচ ও শন উইলিয়ামসের পথ চলা। ৮৯ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় এ জুটি। আর চা বিরতিতে যান ১৬১ রান নিয়ে। ততক্ষণে ৮৯ রানের জুটি গড়ে ফেলেন দুজন। দ্বিতীয় সেশনেও তাদের বন্ধন ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। ১০৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়েলচ। তিন ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার দ্বিতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস।
চা বিরতির আগে উইলিয়ামসও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ১১৪ বলে। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭২ রান যোগ করেন ওয়েলচ ও উইলিয়ামস। তবে প্রচন্ড গরমে বেশ কয়েকবার পেশির টানে শুশ্রূষা নিতে হয় দুই ব্যাটারকে। চা বিরতির পর এক বল খেলে আবারও পেশির টান অনুভব করায় মাঠ ছেড়ে যান ওয়েলচ। ছেদ পড়ে ২৩০ বলে ৯০ রানের জুটির। এরপর যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠে বাংলাদেশের স্পিনাররা। নাঈমের অফ স্টাম্পের বাইরের বল কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন ৫ রান করা ক্রেইগ আরভিন। নাঈমের পরের ওভারে লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন উইলিয়ামস। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে বাম দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন তানজিম। ১৬৭ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় গড় ৬৬ রানের ইনিংস থামে উইলিয়ামসের।
এরপর কেবলই তাইজুল শো। দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার আগে ওয়েসলি মাধেভেরেকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান তাইজুল। দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে ওয়েলিংটন মাসাকাদজার কাছে ছক্কা হজম করেন তাইজুল। পরের বলে তিনি নিয়ে নেন প্রতিশোধ। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন মাসাকাদজা। ঠিক পরের ডেলিভারিতে বোল্ড রিচার্ড এনগারাভা। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন তাইজুল। মাসেকেসা পরের বলটা খেলতে গিয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচের মতোই দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা নিতে পারেননি সাদমান। ফলে হ্যাটট্রিক হলো না তাইজুলের। তবে পঞ্চম উইকেট তুলে নিতে বেশি সময় নেননি এই স্পিনার।
অষ্টম উইকেট পড়ার পর আবার ব্যাটিংয়ে নামেন ওয়েলচ। দুই বলের বেশি অবশ্য টিকতে পারেননি। তাইজুলের বলে স্লগ করার চেষ্টা করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। একইসঙ্গে পূর্ণ হয় তাইজুলের ৫ উইকেট। অবসরে যাওয়ার আগে করা ৫৪ রানের সাথে আর কোন রান যোগ করতে পারেননি ওয়েলচ। তাইজুল ১৬তম বারের মত ক্যারিয়ারে পঞ্চম উইকেট তুলে নেন। দিনের শেষ ৫ ওভারে আর উইকেট পড়তে দেননি টাফাডজোয়া সিগা ও ব্লেসিং মুজারাবানি। ১০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে প্রথম দিন শেষ করেন দুজন। আর জিম্বাবুয়ে দিন শেষ করে ২২৭ রানে। তাইজুল ২৭ ওভার বল করে ৬টি মেডেনসহ ৬০ রানে নেন ৫ উইকেট। নাঈম ২০ ওভারে ৪২ রান খরচায় নিয়েছেন ২ উইকেট।