চীন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, তাইওয়ানের স্বাধীনতা অর্জনের যে কোন চেষ্টার অর্থ হবে যুদ্ধ। কয়েকদিন আগে তাইওয়ানের কাছাকাছি এলাকায় সামরিক তৎপরতা বাড়ানো এবং যুদ্ধ বিমান ওড়ানোর পর এই হুঁশিয়ারি দিল চীন। এমন এক সময় চীন এসব করছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং এশিয়ায় তার নীতি কী হবে তা তুলে ধরেছেন। তবে চীনের এই হুঁশিয়ারিকে যুক্তরাষ্ট্র দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, দুই পক্ষের এই উত্তেজনা কোন সংঘাতের দিকে যাওয়া উচিৎ হবে না।
চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একটি প্রদেশ। কিন্তু তাইওয়ান মনে করে তারা চীন থেকে আলাদা। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাইওয়ানকে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন-তা বেশ কঠোর। খবর বিবিসি বাংলার।
উ কিয়ান বলেছেন, তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তিকে আমরা একটা কথা গুরুতরভাবে জানিয়ে রাখতে চাই: যারা আগুন নিয়ে খেলবে, তারা নিজেদের হাতই কেবল পোড়াবে, এবং তাইওয়ানের স্বাধীনতার মানে হচ্ছে যুদ্ধ। চীনের সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতার পক্ষেও তিনি যুক্তি তুলে ধরে বলেন, তাইওয়ান প্রণালীতে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এ সবই ছিল দরকারি পদক্ষেপ। এটা করতে হয়েছে চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা রক্ষার্থে।
বৃহস্পতিবার চীনের এই হুঁশিয়ারির পাল্টা জবাব আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কার্বি সাংবাদিকদের বলেন, চীনের এই মন্তব্যকে আমরা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করি। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের দিক থেকে চীন-তাইওয়ান সম্পর্কের ব্যাপারে প্রথম কোন বিবৃতি। কার্বি আরও বলেন, তাইওয়ানকে নিয়ে এই উত্তেজনা কেন একটি সংঘাতের দিকে গড়াতে হবে তার কোন কারণ দেখছে না পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে অবনতিশীল সম্পর্কের মধ্যে নতুন মার্কিন প্রশাসন চীনের ওপর অনেকগুলো ইস্যুতে চাপ প্রয়োগের নীতি অব্যাহত রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে মানবাধিকার, বাণিজ্য বিরোধ, হংকং এবং তাইওয়ান।
বিবিসির সাংহাই সংবাদদাতা রবিন ব্রান্ট বলছেন, চীন সাধারণত যুদ্ধের হুমকি দেয় না, তাই তাদের এই হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার কারণ আছে। চীনের সরকারি মুখপাত্ররা সাধারণত যুদ্ধ নিয়ে কথা না বলারই চেষ্টা করে। তারা যে একটি শান্তিপ্রিয় জাতি- সেটাই তারা সব সময় গুরুত্ব দিয়ে বলতে চায়।
রবিন ব্রান্ট আরও বলেন, বিশ্বের কোথাও চীন সামরিক অভিযান চালাতে সৈন্য পাঠিয়েছে, ইতিহাসে এমন নজির নেই। এক্ষেত্রে তাইওয়ান ব্যতিক্রম, কারণ তাইওয়ানকে চীন তাদের দেশের অংশ বলে মনে করে। শি জিনপিং এর নেতৃত্বাধীন চীন বার বার বলেছে, তাইওয়ান যদি আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার দিকে যায়, তাহলে তারা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।
রবিন ব্রান্ট বলেন, যুদ্ধের হুমকি দেয়ার বিষয়টিতে সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বলার মতো অত লুকোছাপা নেই। এটি একদম সোজাসাপ্টা, অনেক বেশি ভীতিকর। একদম অন্যরকমও বটে। সামরিক হস্তক্ষেপ নানাভাবে আসতে পারে। এটি যে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ আর তাদের মিত্রদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আকারে ঘটবে তা নয়।
তাইওয়ানের ব্যাপারে বেইজিং একটা সীমারেখা টেনে দিয়ে রেখেছে। চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের ভৌগলিক সংহতির ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য। যেরকম হংকং এর যে কোন বিষয়কে চীন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মনে করে।