তাঁদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে

| বুধবার , ১৫ জুন, ২০২২ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি এক সমীক্ষা চালিয়েছে। তাতে দেখা যায়, পুরুষের চেয়ে নারীরা সংসারের কাজকর্ম আট গুণ বেশি করেন। নারীরা ২৪ ঘণ্টার অর্ধেক সময়ই সংসারের কাজকর্ম, শিশু-বৃদ্ধসহ পরিবারের সদস্যদের যত্ন-আত্তি করেই পার করে দেন। নারীরা গড়ে ১১ দশমিক ৬ ঘণ্টা এসব কাজে ব্যয় করেন। অন্যদিকে পুরুষেরা সংসারের কাজে ব্যয় করেন মাত্র ১ দশমিক ৬ ঘণ্টা। সংস্থাটি বলছে, নারী-পুরুষ সবাই কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের কাজের ধারায় পরিষ্কার পার্থক্য আছে। ঘরের টুকিটাকি কাজ করা এবং পরিবারের সদস্যদের যত্ন-আত্তি করা দৈনন্দিন কাজের অংশ। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ দুজনের সমান দায়িত্ব পালন করা উচিত। কিন্তু নারীর ওপর বেশি বোঝা হয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটি আরো বলছে, নারীর কাজের স্বীকৃতিও কম। তাঁরা মজুরিহীন কাজেই বেশি সময় দেন। নারীরা প্রতিদিন গৃহস্থালির কাজে ৪ দশমিক ৬ ঘণ্টা করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সেবা করতে খরচ করেন ১ দশমিক ২ ঘণ্টা। সব মিলিয়ে মজুরি ছাড়া কাজ করেন প্রতিদিন ৫ দশমিক ৬ ঘণ্টা। এসব কাজে তাঁরা কোনো মজুরি পান না।
সংসারে বেশি শ্রম নারীরা দিলেও তাঁরা তাঁদের ন্যায্য সম্মান পান না। উল্টো নির্যাতনের শিকার হন যখন তখন। অস্বীকার করা যাবে না যে, নারীর অগ্রযাত্রার পাশাপাশি নারী নির্যাতনও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। যতই দিন যাচ্ছে, নারীর প্রতি সহিংসতা যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী এগিয়ে যাচ্ছে এটি যেমন সত্য, আবার নারী নির্যাতন বেড়েছে সেটিও অস্বীকার করার উপায় নেই।
ধর্ষণের ঘটনা ও এর ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে দেশে বিদ্যমান আইন সংশোধন করার দাবি ওঠে। নারী নির্যাতন তথা নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইনও পাস হয়। এই আইন মূল উদ্দেশ্য পূরণে কতখানি সক্ষম হয়েছে, এর মাধ্যমে নারী ও শিশুরাই বা কতটুকু প্রতিকার পেয়েছে, সেসব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেনি। যে কারণে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০২১ সালকে বলেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বছর।
আমাদের দেশে কোনো অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটলে বা এ নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা হলে আইন প্রণয়ন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। বিষয়টি যেন এ রকম যে আইনের অভাবেই এত দিন অপরাধটি হয়ে আসছিল বা আইন না থাকার ফলেই অপরাধীদের শাস্তি দেয়া যাচ্ছিল না। তবে বাস্তবে দেখা যায়, প্রায় সব বিষয়েই আমাদের আইন রয়েছে। যুগের প্রয়োজনে কিছু কিছু নতুন আইন করা প্রয়োজন হলেও নির্যাতন বা ধর্ষণের মতো অপরাধ দমনের জন্য নতুন করে আইনের প্রয়োজন নেই। নারী নির্যাতনের প্রধান কারণ বিচার না হওয়া। যত দিন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হবে তত দিন এ নির্যাতন চলতেই থাকবে।
আবার আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিশ্লেষকের পর্যবেক্ষণ হলো, এ আইনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে না। দায়িত্ব, জবাবদিহি, কৌশল ইত্যাদি আইনে সঠিকভাবে বলা নেই। ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের সঠিক নির্দেশনা নেই। আরও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এসব দূর করে আইনটিকে আরও যুগোপযোগী করতে হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা আপসযোগ্য নয়। কিন্তু আপস হচ্ছে। যেকোনো কারণেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই মামলা করতে হবে, একথা ঠিক না। মামলার বাইরে সামাজিক ও পারিবারিক সহায়তায় কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আরেকটা বিষয় দেখা যায়, বাদী-বিবাদী প্রায় সময়ই অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে মামলাকে ন্যায়বিচারের পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। ঘটনা যা সেটা দিয়েই মামলা দায়ের করা উচিত। মামলার ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। একটা মেয়ে কখন মামলা করতে আসে, যখন তার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। তাই যেকোনোভাবেই হোক না কেন আইনি সহায়তা প্রদান করতে চেষ্টা করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগী নারীকে কিছুটা সহায়তা করা যায়। সংসারে নারীর অবদানকে মূল্য দিয়ে দাম্পত্য জীবনে অর্জিত সম্পত্তিতে নারীর অধিকার দিতে হবে।
বর্তমান সরকার অত্যন্ত নারীবান্ধব। নারীদের সুরক্ষার জন্য আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। আরও অনেকভাবে সরকার এ ক্ষেত্রে কাজ করছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। তাঁদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে না ভেবে সামনে এগোনো যাবে না। নারী-পুরুষ সবাই সমান। তা বিবেচনা করে আগামী দিনে কীভাবে নারীদের নির্যাতন বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে