তলিয়ে গেল মীরসরাই উপকূলের বেড়িবাঁধ

নদীতে হারিয়ে গেছে ২০০ একর মাছের ঘের

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | রবিবার , ১ জুন, ২০২৫ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে মীরসরাই উপজেলার উপকূলীয় বাঁধ। উপকূলাঞ্চলের চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টের (সিডিএসপি) আওতায় নির্মিত ১১.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধের একাধিক অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছিল পূর্বেই। গতকাল শনিবার নাগাদ কয়েক দিনের টানা বর্ষণের দরুণ সেই বাঁধের প্রায় অংশই এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় মীরসরাই ও সোনাগাজী অংশে নদীভাঙনে প্রায় ২০০ একর মৎস্য খামার সম্পূর্ণভাবে নদীতে হারিয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও অন্তত ৫০০ একর এলাকা।

উপজেলার মুহুরী প্রকল্পের নিম্নাঞ্চলের ইছাখালী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও মৎস্য খামার মালিকেরা জানান, উপকূলীয় বাঁধ রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মীরসরাইয়ে গড়ে ওঠা ৩৪ হাজার একরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিইজেড) এলাকা ও হুমকির মুখে পড়বে। একইসঙ্গে বাঁধ ভেঙে গেলে লবণাক্ত পানি ঢুকে উপজেলার ৫ নম্বর ওচমানপুর ও ৬ নম্বর ইছাখালী ইউনিয়নের ১০১২টি গ্রামে দেখা দিতে পারে জলাবদ্ধতা ও বন্যা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মুহুরী সেচ প্রকল্পের ভাটিতে প্রায় ১১ শত বর্গমিটার এলাকায় পলির স্তর জমেছে। এতে নদীর প্রবাহ পথ বদলে সোনাগাজীর থাক খোয়াজের লামছিতে ছোট ছোট চর জেগেছে। অপরদিকে মীরসরাই অংশের উত্তর ইছাখালী অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পলি জমার কারণে মুহুরী সেচ প্রকল্পের বেশ কিছু স্লুুইচ গেটও কাজে আসছে না। সিডিএসপি বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ফেনী নদীর অববাহিকায় পড়েছে। বাকি অংশ বঙ্গোপসাগর অববাহিকায়। একসময় নদী ও সাগর থেকে বাঁধের দূরত্ব ছিল প্রায় ৩ হাজার মিটার। বর্তমানে এই দূরত্ব কোথাও ১০ মিটার, কোথাও ৫ মিটার। তবে বিভিন্ন সময় ভাঙনরোধে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সিসি ব্লক দেওয়া হলেও সেগুলো নদী গর্ভে চলে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিডিএসপি বাঁধের পশ্চিম পাশে সুরক্ষা ব্লক না বসালে চলতি বর্ষায় এখানকার বহু মৎস্য প্রকল্প নদী ভাঙনে তলিয়ে যাবে।

ওচমানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আতাউল্ল্যাহ রনি বলেন, ২০১৯ সালের শুকনো মৌসুমে মুহুরী সেচ প্রকল্পের মুখে বালু ও মাটি জমা শুরু হয়। ওই বছরের বর্ষায় ভাঙন শুরু হয়। এর আগে প্রায় ৩ দশকেও এমন ভাঙন দেখা যায়নি। বর্তমানে ভাঙনের মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে। এতে করে এখানকার মৎস্য প্রকল্পগুলো বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা এই বাঁধ দ্রুত সংস্কারের বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

স্থানীয় কৃষক হোসেন আহম্মদ বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে এই নদীর আচরণ দেখে আসছি। মুহুরী প্রকল্পের ভাটিতে যে পলি জমেছে তা খনন করলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। আমার বয়সেও এখানে এমন ভাঙন দেখিনি। মূলত পলি জমার কারণে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করা হয় এ সিডিএসপি বাঁধ। এরপর এ বাঁধ ঘিরে গড়ে ওঠে শত শত মৎস্য প্রকল্প, যা চট্টগ্রামের মাছের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করে আসছে। মৎস্য খামার মালিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার বলেন, বাঁধ রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার বলেন, বাঁধ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে জিও ব্যাগ ফেলাসহ মেরামত কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিভিন্ন এনজিওর ১২৫০ জন স্থানীয় শিক্ষক চাকরিচ্যুত
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে নদী ও খালে ডুবে কিশোরীসহ ২ জনের মৃত্যু