তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বাড়াতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে

| শুক্রবার , ২৫ জুন, ২০২১ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

জনবহুল বাংলাদেশের বৃহৎ একটা অংশ তরুণ প্রজন্ম। আর কর্মক্ষম তরুণরাই দেশ ও জাতির মূল চালিকা শক্তি। তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বাড়ালে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। দক্ষ জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। আমাদের দেশে সবশেষ শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছিল ২০১৭ সালে। জরিপের সেই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। সেই তথ্য অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। আর তাদের মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। পত্রিকান্তরে বলা হয়, কর্মক্ষম থেকে কর্মরত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বিয়োগ করলে পাওয়া যাচ্ছে বেকারের সংখ্যা। সেটা ২৭ লাখ। এ তো তিন বছর আগের হিসাব। কেননা চলমান করোনা মহামারীর বছর তো বটেই তার আগের দুই বছরও দেশে কোনো শ্রমশক্তি জরিপ হয়নি।
করোনাকালে যে লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়ে নতুন করে বেকার হলো তাদের সংখ্যা কত। আর বিগত তিন বছরে নতুন কর্মসংস্থানই বা কতটুকু হয়েছিল! করোনাকালে বেকারত্বের একটা হিসাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। প্রতিষ্ঠানটি এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর কারণে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এমএসএমই) কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছেন। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, করোনা মহামারীর কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম। করোনা মহামারীতে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে। আইএলওর হিসাবে, এই তরুণদের সবাই পূর্ণকালীন কাজে নিয়োজিত থাকলে বাংলাদেশে করোনাকালে বেকারের সংখ্যা হতো অন্তত ১৬ লাখ ৭৫ হাজার।
চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও মানুষের গড় আয়ু আরো বাড়বে বলেই ধরে নেওয়া যায়। এই হারে বাংলাদেশে ২০৩০ সালের আগেই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে, যার একটি বিশাল প্রভাব পড়বে শ্রমবাজারের ওপর। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৪৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় প্রবীণদের সংখ্যা বেশি থাকবে। বাংলাদেশে এখন ৬৮ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু তিন দশক পরে প্রবীণদের সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে দেশের সার্বিক উৎপাদনেও একটি বড় ঘাটতি দেখা দেবে। বর্তমান হারে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে চার কোটি। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রবীণদের ৫৮ শতাংশের দারিদ্র্যের কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণেরই সামর্থ্য নেই। সেখানে তাদের বৃদ্ধ বয়সে অন্য সেবা পাওয়াটা যে কতটা কঠিন তা বলাই বাহুল্য। অন্য এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে ২০৫০ সাল নাগাদ তরুণদের সংখ্যা ১০ থেকে ১৯ শতাংশে নেমে আসবে। ফলে তখন কর্মক্ষম নবীনের সংখ্যা স্বল্পতা দেখা দিবে। তাই আজকের এ বিশাল কর্মক্ষম ও উদ্যমী তরুণ প্রজন্মের সামনে বিরাট সম্ভাবনা ও সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যত উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। এ সম্ভাবনাময় তরুণ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার এখনই উপযুক্ত সময়।
আমাদের ভাবতে কষ্ট হয় যে, তরুণ প্রজন্মের অনেকে নানা রকম আসক্তিতে আসক্ত। মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং প্রভৃতি সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে উঠেছে। নতুন প্রজন্মকে এসব ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষার জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের সচেতনতাও জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণদের বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে খেলাধুলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা। তাই সারা দেশে গড়ে তুলতে হবে এর অনুকূল পরিবেশ।
বিশ্ব জুড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে চলার তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তরুণ সমাজকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। তাদের মধ্যে যে অফুরন্ত সম্ভাবনা ও সুপ্ত সৃজনী শক্তি রয়েছে তা জাগিয়ে তুলতে হবে। এর জন্য চাই জ্ঞানভিত্তিক গুণগত শিক্ষা, যার আলো তাদের অন্তরকে আলোকিত করবে, সম্ভাবনা ও সুপ্তশক্তিকে উন্মোচিত করবে, আত্মবিশ্বাসী ও কর্মোদ্যোগী করে তুলবে।
আমরা জানি, বর্তমান সরকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, সে হিসেবে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তরুণরা প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলে নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই তৈরি করতে পারবে। তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে